মলয় দে, নদীয়া:- বছরখানেক আগে এক ডার্বিকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণনগর গভমেন্ট কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ইস্টবেঙ্গলিয়ান প্রিয়াংকা বিশ্বাস এবং শান্তিপুরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রথীক বিশ্বাসের লড়াই মাঠ ছেড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্টের কমেন্ট লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিলো, গড়িয়েছিলো ফোনে বাক্য যুদ্ধতেও।
প্রিয়াঙ্কার বাড়ির কাকা দাদা এমন কি মামা বাড়ির সকলেই ইস্টবেঙ্গল দলের অন্ধ সাপোর্টার। অন্যদিকে রথীকের বাড়ির পাশেই স্টেডিয়াম! ভাই বাবা কাকা সকলেই মাঠে পরিবারের অন্য সদস্যরা মাঠের বাইরে সমর্থক মোহনবাগানের।
চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করার মতোই, ফোনে ফুটবল বিতর্ক থেকেই কবে কবে প্রিয়াঙ্কা এবং রথীক এর মধ্যে গড়ে উঠেছিলো গভীর প্রেম তা তারা নিজেরাও জানেনা।
নিজেদের পছন্দের পর সামাজিক মতে সকলের উপস্থিতিতে গত ১লা ফেব্রুয়ারি তারিখ শুভ পরিণয় এর দিন ঠিক হয়। জীবনের খেলা শুরু হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেই সপাটে এক গোল প্রিয়াঙ্কার! সবুজ মেরুন শেরওয়ানি পরিহিত গোলরক্ষকের ভূমিকায় বর রথীক , অবাক দৃষ্টিতে দেখে নতুন বউ অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কা লাল ব্লাউজ হলুদ শাড়িতে। এরপর খেতে বসে, ইলিশের ভাপাদিয়ে আরো এক গোল! অন্যদিকে গলদা তো দূরে থাক! এঁচোড়ের দু পিস কুচো চিংড়িও দেয়নি মোহনবাগান অবমাননার কারণে। বরযাত্রী অনেকেই ঢোক গিলে খেয়ে নিলেও, রথীক এবং তার কট্টরপন্থী কয়েকজন বন্ধু সবকিছু খেলেও কিছুতেই মুখে দিলো না এমন সুন্দর সরষে ইলিশ ভাপা। দু গোল খেয়ে গতকাল নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছিল ফন্দি আঁটা, যোগ্য জবাব দিতেই হবে! এ হার সমগ্র মোহনবাগান পরিবারের।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শান্তিপুর বাইপাস সংলগ্ন ভাড়া করা অতিথি নিবাস পথের সাথীর গেটে বড় করে মোহনবাগান এর লোগো, অতিথি আপ্যায়নে জীবন্ত মডেল সেটাও মোহনবাগানের অনুকরনে, প্যান্ডেলের কাপড় মেরুন সবুজ! টেবিলে বসানো মেনু কার্ড , এবং নতুন বউ বসানোর মাথার উপর বড় করে মোহনবাগানের লোগো। এভাবেই বিয়ের অর্থাৎ প্রথমার্ধের দুই গোল কোনরকমে বৌভাতে শোধ দিলো নবকলেবর । তবে প্রিয়াঙ্কাকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখা গেলো না, বৌভাতে লাল হলুদ শাড়ি না পড়লেও মেরুন সবুজ শাড়ির বদলে নীল-গোলাপি পড়েই কাটাল সে। আর মেনুতে গলদা! কখনই নয় শ্যালিকেরা যখন গেট আটকেছিলো তখনই পণ করেছিলো , মেনুতে চিংড়ি থাকলে দরজা বন্ধ থাকবে। অবশেষে শ্যালীকা দের দাবি মেনেই ড্র ঘোষণা করে জামাইবাবু। তবে বর-কনে দুপক্ষই জানায় খেলা হবে…. জোর খেলা হবে।
প্রিয়াংকার বাবা গৌতম বাবু জানান, প্রতিবছর ডার্বি ই সি এল এর সময় অষ্টমঙ্গলা পালিত হবে। জামাই বাবুর বাড়ির অন্য কেউ তার বাড়িতে গেলে, আলাদা দুটি টিভি বন্দোবস্ত করবেন তিনি। বিয়াই বিয়ানের সাথে সারা জীবন থাকবে লাল-হলুদের ভালোবাসা কখনোই সবুজ মেরুনের নয়!
পাশের দাদা রমেন বিশ্বাস জানান, মাঠের লড়াই ঘরে হবে না কখনো!
আমন্ত্রিত এক টেবিলে বসা কিছু ক্ষুদে সমর্থকদের মধ্য থেকে দেবজ্যোতি বৈদ্য জানায়, বাঙালি মানেই মোহনবাগান তাই আগে ভাগেই খাওয়ারটেবিলে নো বেঙ্গলিয়ান।
দীর্ঘদিনের খেলোয়াড় তপন চ্যাটার্জি জানান ইস্টবেঙ্গলিয়ান কন্যাযাত্রীদের স্বাগত জানানো হয়েছে মোহনবাগান ঘরানায়, বৌমাকেও পাল্টাতে বেশি দেরি হবে না!