মলয় দে, নদীয়া:- “প্রাণ যায় যাক! চক্ষু বেঁচে থাক। দীপ্ত হোক চরাচর! কি বলে দেহ নশ্বর?”
আধ্যাত্মিক মতে বলে, এ দেহ ঈশ্বর প্রদত্ত! স্বামী বিবেকানন্দর কথায় জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
আর যদি বিজ্ঞান মতে জানতে চান! তাতেও আমাদের শরীরের চোখ কিডনি, হৃদপিণ্ড, যকৃৎ, ফুসফুস, চামড়ার টিস্যু, অস্থিমজ্জা, শিরা ধমনী, অন্ত্র, স্বরযন্ত্র, হাত ও পায়ের পাতা ও আঙুল, কানের হাড়, পুরুষাঙ্গ, স্নায়ু ,অগ্নাশয় মস্তিষ্কেরমৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে অন্য দেহে প্রতিস্থাপনযোগ্য। মৃত্যুর সাথে সাথে অকৃত্রিম এই গুরুত্বপূর্ণ শরীরের অংশগুলি আগুনে পুড়িয়ে, কবর দিয়ে নষ্ট করার কোনো যৌক্তিকতা নেই! বরং একজন মুমূর্ষু রোগীকে নতুন জীবনের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়ে বাঁচা যায় আরো একটি জন্ম।
একথা নতুন নয়! বুঝি সকলেই, বাস্তবে রুপদিই কতটুকু! যারা একাজের সাথে যুক্ত, একমাত্র তারাই জানেন বেঁচে থাকার সময় অঙ্গ/দেহ দানে অঙ্গীকারবদ্ধ ব্যক্তি মৃত্যুর পর শত অজুহাত উপস্থাপিত করেন আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী প্রায় সকলেই! সংগ্রাহকরা শোকোস্তব্ধ পরিবারের সাথে বিতর্কে না গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, অথচ সেই পরিবারেরই প্রবীণ সদস্যরা বিজ্ঞানমনস্ক, কেউবা বড় ধার্মিক! অনুপস্থিত কোনো অভিভাবকের উপর দোষারোপ করে নানান কুসংস্কারক বিষয় উপস্থাপিত করেন। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্তদান চক্ষুদানের বার্তায় ঝড় তোলা এ প্রজন্মের সদস্যরা ক্ষণিকের জন্য গুরুজনের আনুগত্য লাভ করে। তবুওতো কেউ আছে ! যারা সিদ্ধান্তে অনড় থাকে! এবার আমরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করব আই ব্যাংঙ্ক গুলোর উপর, সম্প্রতি বহুল প্রচারিত একটি সংবাদ মাধ্যমের সার্ভে থেকে জানা যায়, গত মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সংখ্যাটা ধীরে ধীরে কমছে।
চক্ষুদান করলে সরকারের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের বাড়তি কোন সুবিধার বন্দোবস্তও নেই! যাতে অন্তত অসচেতন কিছু পরিবারের এই মহৎ কাজে আগ্রহ জন্মায়! জেনে রাখা দরকার, দুই-একটি চক্ষুর কর্নিয়া সংক্রান্ত রোগ ছাড়া , যেকোনো কারণে মৃত ব্যক্তির চোখ সংগ্রহ করা যায়। এবং একজন মৃত ব্যক্তির দুটি কর্নিয়া থেকে পৃথক দুজন ব্যক্তি এ পৃথিবীর ভালো দেখতে পারে।
সারা রাজ্যের মতো কর্নিয়া প্রদানের সচেতনতা আন্দোলনে নদীয়াও পিছিয়ে নেই! “রাখি” নামক একটি পত্রিকা বহু বছর যাবৎ ধারাবাহিকতার সাথে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর তুলে ধরে পাঠকের কাছে। নদীয়া জেলার শান্তিপুরের “মরমী” ২০১৪ সালের মে মাসে কর্নিয়া সংগ্রহের কাজ প্রথম শুরু করলেও, ১৪ এবং ১৫ এই দুই সালে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন মাত্র ৬ টি, তবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে এই ক’বছরে অবশ্য মোট ২৮৪টি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। কলকাতা বা দূরবর্তী কোন আই ব্যাংকের সদস্যদের নদীয়ায় পৌঁছাতে সময় লেগে যায় বেশ খানিকটা! তাই শান্তিপুর মরমীর পক্ষ থেকে, জেলায় একটি কর্নিয়াসংগ্রহশালা স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হয়েছেন। এ বিষয়ে সরকার এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেককের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
সমগ্র খবরটি হৃদয়াঙ্গম হয়েছে নিশ্চয়! কিন্তু তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ কতটুকু হয়, সেটাই নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন থেকে যায়! কবিগুরুর ভাষায়
“অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ-
তুমি করুণামৃতসিন্ধু করো করুণাকণা দান ।।”