মলয় দে নদীয়া:-শিবের বিয়ে! শ্রীচৈতন্য ভূমি বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপ ধামের প্রাচীন শিবকেন্দ্রিক লোক উৎসব। প্রতিবছর বাসন্তী পূজার পরে বাসন্তী দেবীর সঙ্গে শিবের বিয়ে হয় হিন্দু মতে বিবাহের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান মেনেই। এ বছরেও সমস্ত নিয়ম মেনে সেই উৎসব পালন করা হল শহরের বিভিন্ন শিব মন্দিরে মহাসমারহে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উৎসবের এক আমেজ। শিব পার্বতীর বিয়ে উপলক্ষে নবদ্বীপের বিভিন্ন শিব মন্দির সেজে ওঠে। বিভিন্ন যৌতুক দিয়ে সাজানো হয় বিয়ের বাসর। আতশবাজি ফাটিয়ে বেহারাদের কাঁধে চেপে বিয়ের মন্ডপে হাজির হন মহাদেব এবং নববধুর সাজে হাজির হন বাসন্তী দেবী রূপে স্বয়ং পার্বতী।
পুরোহিতের উপস্থিতিতে চার হাত এক হওয়া থেকে সাত পাকে ঘোরা এবং মালাবদলও হয় এই অনুষ্ঠানে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে নবদ্বীপের বিভিন্ন শিব মন্দিরের ভিড় করেন স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা অসংখ্য মানুষ। বাসন্তী দশমীর রাতে শিব পার্বতীর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহকারে সিংহাসনে বসে বেহারাদের কাঁধে চেপে মহাদেব বিয়ে করতে আসেন বিভিন্ন শিব মন্দিরে।
নানা অনুষ্ঠানের পর ভোররাতে এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে নবদ্বীপের প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত শিব মন্দিরের বুড়ো শিব, যোগনাথ শিব, বউবাজারের বানেশ্বর শিব, দণ্ডপানিতলার দণ্ডপানি শিব ও চারিচারা বাজারের বালকনাথ শিব মন্দিরের প্রাঙ্গণ আলোকমালায় সেজে ওঠে। বিয়ের সকাল থেকেই শিব পার্বতীর বিয়ের বাসর সাজান ভক্তরা। যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে নানা দান সামগ্রী। বিলাসবহুল গাড়ি, ফ্রিজ, টিভি, খাট, আলমারি বাইক থেকে শুরু করে কাঁসার বাসনপত্র, বরের পাঞ্জাবি কনের বেনারসি ও আরও অনেক কিছু।
নবদ্বীপের পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের কথায় এটি একটি শিবকেন্দ্রিক লোক উৎসব। এই উৎসব নবদ্বীপ ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। চৈত্র মাস জুড়ে শিবের নানা উৎসব হয়। শিব বাসন্তী অর্থাৎ পার্বতীকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, বাবার বিয়ে দিচ্ছেন ছেলেমেয়েরা! এমন দৃশ্য নবদ্বীপেই দেখা যায়। বিয়েতে বিভিন্ন যৌতুক সামগ্রী স্থানীয় দোকান থেকে কিনে দেন ভক্তরা। সেই সব যৌতুক দিয়েই সম্পন্ন করা হয় এই বিয়ে। বিবাহের পরের দিন সেই সমস্ত যৌতুকের জিনিস যেই দোকান থেকে নেওয়া হয়েছে পুনরায় সেই দোকানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এভাবেই যুগ যুগান্তর ধরে নবদ্বীপের প্রাচীন এই লোক উৎসব হয়ে আসছে।