রক্তের দাবিতে বিক্ষোভ সভা, নদীয়ার শান্তিপুরে উঠে এলো দীর্ঘদিনের ন্যূনতম বিভিন্ন পরিষেবার বেহাল দশা

Social

মলয় দে, নদীয়া :- অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা আর অবশ্যই স্বাস্থ্য ! রাষ্ট্রের কাছ থেকে একজন নাগরিক হিসেবে এগুলি ভীষণ প্রয়োজন। তবে এ তালিকা থেকে জীবিকার চাহিদা এখন ভুলতে বসেছি আমরা ! আজকের আলোচ্য বিষয় স্বাস্থ্য! যা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প, বেসরকারি সংস্থার স্বাস্থ্য বীমা চালু থাকলেও, স্থানীয়স্তরে কিছু ব্যক্তির ত্রুটি-বিচ্যুতির ফলে ভোগান্তির চরম নিদর্শনও মাঝে মাঝে উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে! শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না পেয়ে প্রিয়জন হারানোর ক্ষোভে অধৈর্য হয়ে সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পৌঁছানোর ঘটনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও, রোগী পরিবার হেনস্তার জন্য কর্তৃপক্ষের শাস্তি খুব একটা দেখা যায়না, হলেও নগণ্য । বর্তমানে এই সমস্ত সমস্যা মেটানোর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য কমিশন বসানো হয়েছে।  নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে কাজ করা ব্যক্তি এধরনের অসহযোগিতা পেয়েছেন সরকারি হাসপাতাল এবং হাসপাতাল সম্পর্কিত ব্লাড ব্যাংক থেকে।

লকডাউন চলাকালীন সময় থেকে ব্লাডব্যাংকগুলো রক্তশূন্যতা প্রায় বলা চলে। রক্তস্বল্পতা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্দেশ এবং সরকারি নির্দেশে বিভিন্ন থানায় করোনা পরিপ্রেক্ষিতে ডিউটি করা সত্ত্বেও পুলিশ কর্মীদের উদ্যোগে চলছে রক্তদান শিবির,   ক্লাব এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সক্রিয়তায় রক্তদানের আয়োজন কম হয়নি জেলায়! অথচ রক্ত দেওয়া হলেও রক্তের কার্ড পেতে দেরী হয় অভিযোগ বিভিন্ন রক্তদান আয়োজক কর্তৃপক্ষের।

বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, ব্লাড ব্যাংক সম্বলিত এক হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য, বাড়ির নিকটস্থ অপর এক ব্লাডব্যাংক সম্বলিত হাসপাতালে রক্তদান করার বন্দোবস্ত নেই। হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী বহু মূল্যের বিভিন্ন চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রের অপারেটর অমিল বা সব হাসপাতালে সব যন্ত্র নেই। এমনকি করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ মর্গ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্যই হোক বা অন্য কোন অসুস্থতার কারণে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, কখনো কখনো মোটা টাকা চেয়ে বসেন এই কাজে প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প দুই একজন! অথচ এই কাজের সাথে যুক্ত যদি পর্যাপ্ত ব্যক্তি যোগান থাকতো তাহলে, তাদের দাম্ভিকতার জায়গা থাকতো না বলেই মনে করেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা।

গতকাল সন্ধ্যায় শান্তিপুর ডাকঘরে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সভায় লেখক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী , বুদ্ধিজীবী সকলেই একযোগে বলেন এ ধরনের নানা সমস্যায় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! তাদের বেশি করে মানবিক হওয়া প্রয়োজন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এধরনের সমস্যা। হাসপাতাল কেন্দ্রিক নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে উঠে আসলো রাস্তা, আলো, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার মতো বেশ কিছু জ্বলন্ত সমস্যাও। এমনকি পৌরসভার নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে যত্রতত্র আবর্জনায় আগুন ধরে যাবার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে এই শহরে! এত পুরনো শহর! পশ্চিমবঙ্গের পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও , ভারত বিখ্যাত বেশকিছু কৃতি সন্তানের জন্ম এই মাটিতে অথচ সেই মাটিতেই ন্যূনতম সাধারণ কিছু পরিসেবা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত বলেই জানান তারা।

প্রায় প্রত্যেকের মুখেই আক্ষেপের সুরে ভেসে আসে, বহু ঐতিহ্যমন্ডিত এই শহরে বিভিন্ন পর্যায়কালে শাসনভার থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কোন দলই আন্তরিক হয়নি জন্মভূমির শ্রীবৃদ্ধির ব্যাপারে। যেখানে প্রায় প্রতি দিনই “তাঁতিদের ইলেকট্রিক বিল মুকুব” “পরিযায়ী শ্রমিকদের একাউন্টে অর্থপ্রাপ্তি” “আর নয় অন্যায়” “দুয়ারে সরকার” “পাড়ায় পাড়ায় সমাধান” নানান জনদরদি রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে ব্যতিব্যস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। একে বলো তাকে বলো তে বলেও কোনো লাভ হয়নি।

গতকালকে বিক্ষোভ সভা থেকে, সাধারণ মানুষের জন্য সমর্থনে সংগৃহীত হয় এক হাজারেরও বেশি স্বাক্ষর! যেখানে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সময় অভাবে, প্রকাশ্যে না আসতে পারলেও মানসিক উপস্থিতি জানিয়েছেন তারা। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষের দিকে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য কে দেখা গেলো স্বাক্ষর প্রদান করতে, তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জানান ” জনগণ আমায় জনপ্রতিনিধি বানিয়েছে, তাদের দাবি আমারও দাবি, তাই সহমর্মিতা জানাতেই উপস্থিত হয়েছি। এবং এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি দাবি সনদ পেশের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করতে রাজি।”

Leave a Reply