মলয় দে, নদীয়া:- অনেকটা ঠিক হিন্দি সিনেমা মতো ঘটনা। তবে থ্রি ইডিয়টস কখনোই নয়! বরং তিন বন্ধুর ভিন রাজ্যের চায়ের স্বাদ স্বভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সংকল্প।নদীয়ার শান্তিপুরের, প্রীতম দাস, দ্বীপ দত্ত, প্রণব দাস নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে পড়াশোনা করে কাজের তাগিদে সুদূর হায়দ্রাবাদে পৌঁছায় কর্মের খোঁজে। হন্য হয়ে ঘুরে বেরিয়ে, অবশেষে জোটে চায়ের দোকান! না তবে যে সে চায়ের দোকান নয়। প্রথমেই সাত হাজার টাকা বেতন, এক বছরের মধ্যে বেড়ে তা ১২ হাজারে পৌঁছেছে! পরিবারের টানে লকডাউন ঘোষণার আগেই সে ফিরে এসেছিলো বাড়িতে। সেই থেকে পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন সহবস্থানের ফলে লকডাউন শিথিল হলেও আবেগের বাঁধন শিথিল না হয়ে বরং দৃঢ় হয়েছে আরও , তাই মালিকের ডাকে সাড়া দিয়ে যাওয়া হয়নি আর!
অগত্যা তিন বন্ধুকে নিয়ে শান্তিপুর হাসপাতালের কিছুটা দূরে খুলে ফেলেছেন, অভিনব চায়ের দোকান! হায়দ্রাবাদ, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র গুজরাটে বিভিন্ন ধাবায় দেখা গেলেও তন্দুরি চায়ের প্রচলন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু-একটি থাকলেও, নদিয়ায় বিরল। তাই রীতিমতন মাইক প্রচার করে শুভ উদ্বোধন হয়েছে দোকানের। তবে চায়ের দোকানের আড্ডার ঠেক হবেনা ! কারণ কিছুটা দূরেই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালে যাওয়ার মূল রাস্তার উপরে অবস্থিত এর দোকান। তবে তা হয়তো মঙ্গল দোকানের ক্ষেত্রে। তিন বন্ধুর মধ্যে দোকানদার প্রিতমের কথায় কাঁচা পয়সার অভাব নেই শান্তিপুরে, শখ পুরনেও জুড়ি মেলা ভার এখানকার মানুষদের। তবে সাহস করে কেউ, করেনি কোনোদিন। তাই হয়তো অভ্যাস নেই! তবে এই তিন দিনে যেটুকু বুঝেছেন, তাতে বেশ আশাবাদী তিনি। শুধু চায়েরই যে এত রকম আছে, তা বই পত্রে পড়াশোনা করলেও স্বাদ গ্রহণ করেননি অনেকেই! দামও হাতের নাগালেই! ১০ টাকা থেকে শুরু ২০ টাকায় শেষ। এরমধ্যে চকলেট, কেশর, বাদাম, গোলমরিচ, ভ্যানিলা, ম্যাংগো, পাইনাপেল, রাবড়ি আরো কত কি! একান্তই যদি অভ্যাসগত কারণে, চায়ের দাম চুকাতে পকেট থেকে খুচরো পয়সা ওঠে! তা হলেও ক্ষতি নেই! মিলবে “মনের মিল চা “। তারা জানান বাচ্চা এবং মহিলাদের জন্যও রয়েছে উপযোগী চা। স্বাস্থ্য সচেতনতার খুঁতখুঁতে ব্যক্তির জন্য রয়েছে ইমুনিটি চা। মাটির বিভিন্ন আকৃতি, ডিজাইনের ভাঁড়ে ধূমায়িত চায়ে চুমুক দিয়ে গৃহবধূরাও জানালেন পয়সা দিলেও মিলত না মনপসন্দ চা, তাই সাধারণ দোকানগুলিতে পুরুষের ভিড়।
অপর দুই বন্ধু দোকানদারের কাছ থেকে জানা যায়, দুপুর তিনটে নাগাদ তন্দুরি আগুন দিতে হয় কয়লায়, চলে রাত দশটা পর্যন্ত, নিয়মিত লাগাতার ক্রেতা থাকলে তবেই খরচে পোষাবে। তবে লাভ পরে দেখা যাবে, নতুন কিছু করার সাহস না দেখালে! নতুন আসবে কিভাবে?
তবে ভিড়ের মাঝথেকে মজা করে
” চা কি আমরা খাব না ” কথাটি শোনা না গেলেও, বিরক্তির সুরে “চা কি আমরা পাবোনা? ” শোনা যাচ্ছে কর্মব্যস্ত বেশ কিছু মানুষের মুখ থেকে।