নিউজ সোশ্যাল বার্তা,৭ইনভেম্বর ২০১৯, সঞ্চিতা মন্ডল : যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৭ অক্টোবর ২০১৯,গন্তব্যস্থল মিশর । মিশর মানেই পিরামিড, মিশর মানেই নীল নদ, মিশর মানেই ধূ ধূ মরুভূমি। আমরা ১৭ ই অক্টোবর রাত্রি ৯.১৫ মিনিটের Vistara ফ্লাইটে করে মুম্বাই পৌঁছলাম । মুম্বাই তে চেক ইন করে ইমিগ্রেশন করে ৪ ঘন্টা লেওভারের অপেক্ষায় ছিলাম । ৪ ঘন্টার লেওভার কাটিয়ে ১৮ তারিখ ভোর ৫ টার সময় কুয়েত Airways e Kuwait পৌঁছাই কুয়েতের সময় অনুসারে সকাল ৭.০৫ মিনিট। কুয়েতের সময় আমাদের থেকে ২.৫ ঘণ্টা পিছিয়ে। তারপর সকাল ৮.৫০ মিনিটে আমাদের কুয়েত থেকে কায়রো উড়ান ছিল । কায়রোতে গিয়ে নামি ১০.৪৫ মিনিটে তবে তা ছিল কায়রোর সময় অনুসারে । কায়রো আমাদের থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পিছিয়ে।
প্রথম দিন:
আমাদের দলে ছিল মোট ২৯ জন সদস্য । তার মধ্যে ৮ জনের ভিসা ছিলো না, ওখানে নেমে on arrival visa করানো হলো । এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে গ্রুপ এ গেলে মিশরে শুধুমাত্র on arrival visa হয়। না হলে কিন্তু ভিসা করে তবেই এই দেশে ঢোকার নিয়ম। ভিসা চার্জ ওই ৬ হাজার টাকা এর মধ্যে । ভ্রমণ ভিসার জন্য আমরা ট্যুর কোম্পানি কে ৬০০০ টাকা দিয়েছি। লাগে ১৯০০ টাকা। অতিরিক্ত টাকা কেন নিয়েছে তা আজ অবধি আমার কাছে অজানা। আর বলে রাখি যতদূর জানি অনলাইন ভিসা ইজিপ্ট এর হয় না । ইজিপ্ট এর ভিসা পেতে গেলে ভারতীয় দের Delhi ‘র Egypt Embassy থেকে করিয়ে নিতে হয়। নিজেরা যে ডলার(US) নিয়ে গিয়েছিলাম সেই ডলার কে ইজিপশিয়ান পাউন্ড করানো হলো।
(হোটেলের রুম )
কেননা বেরিয়েই জল কিনতে হবে। জল কোথাও কোনো হোটেল দেবে না। জলের নির্দিষ্ট দাম নেই । জল কে নিয়ে টুরিস্ট দের কাছে ভালো ব্যবসা করে ওরা এটা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমাদের টুর ম্যানেজার প্রতিদিন ১ লিটার করে জল দিত প্রতি জনকে। বাকি জল কিনে খেতে হবে কোথাও ৫ লিটার জলের দাম ১৫ পাউন্ড তো আবার কোথাও দাম ১০ পাউন্ড। ইজিপ্ট এর ১ পাউন্ড মানে ভারতীয় মুদ্রা তে ৪.৫ টাকার কাছাকাছি। যাই হোক লাগেজ নিয়ে Airport থেকে বেরিয়ে বাস ঠিক করা ছিলো উঠে পরলাম । ড্রাইভার লাগেজ বাসের পেটে চালান করে দিল। বলে রাখি আমরা সব চেয়ে জঘন্য টুর কোম্পানি’র সঙ্গে গেছিলাম সেটা হলো voyegers club।। বাসে উঠে আমাদেরকে বললো আজকে আর ইজিপ্ট এর মিউজিয়াম দেখানো যাবে না অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তখন ওই ১২ .৩০ মিনিট সময় । বললো এরপর লাঞ্চ করে মিউজিয়াম পৌঁছাতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। মিউজিয়াম শহরের অন্যদিকে। আমাদের কারো খিদেও পাইনি তবুও গ্রুপ এর ২৯ জন লোক টুর ম্যানেজার এর কথা মেনে নিলাম। লাঞ্চ এ নিয়ে গেল একটা ইজিপ্টের রেস্টুরেন্টে।বুফে লাঞ্চ। টুর ম্যানেজার ডেকে বললো মিট মানে বীফ চিকেন মানে চিকেন ফিশ মানে ফিশ। কথাটা শুনে কেমন কেমন লাগলেও খাবারের দিকে এগোলাম। ঢাকা তুলে তুলে দেখলাম। প্রথমেই দেখলাম মিট বলস। দেখেই গা গুলিয়ে উঠলো । এই বীফ দেখে গা আমার গুলিয়ে ওঠা ব্যাপারটা অনেকের অনেক কিছু মনে হতে পারে কিন্তু সবার মত তো আমার রুচি নয় । খাবারটা যার যার নিজের রুচির উপর নির্ভরশীল, আর ভালো খারাপ সেটাও আপেক্ষিক। আমার বীফ দেখলেও যেমনি গা গোলায় তেমনি শুয়োর এর মাংস দেখলে এবং শুটকি মাছ গুগলি দেখলে লালতে শাক এবং মদের গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে কখনো কখনো দুধ দেখলেও আবার ফল কাটা অবস্থাতে পড়ে থাকলেও গা গুলিয়ে ওঠে। খাবার কখনই adjustment হয় না। যাই হোক তার পাশেই দেখলাম গ্রিলড চিকেন। তার পাশেই সেদ্ধ অল্প তেলে ভাজা সবজি সুপ স্টিকি রাইস, নুডুলস,ডেজার্ট এ ছিলো নানা রকম এর পেস্ট্রি ওদের দেশে বানানো মিষ্টি সুজি দিয়েই মনে হয়েছে। নানা রকমের স্যালাড, ফ্রুটস ছিলো-খেজুর আর লেবু বেশি। কোনো রকমে প্রথম দিন খাবর অনিচ্ছা সত্বেও গলদকরণ করে বেরোলাম। বাসে উঠলাম। আমাদের টুর গাইড ছিল ফারুক,পরিচয় হলো উনার সঙ্গে । বাসে উঠে আমাদের টুর ম্যানেজারের নাটক। মিউজিয়াম আজকে দেখানো যাবে না।
(লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো )
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম কবে দেখানো হবে বললো শেষ দিনে। শপিং এ সময় কম দেবো। আমরাও বোকার মত ওনার কথা মেনে নিলাম। সাথে সাথে বলছে তাছাড়াও অনেকে খুব ক্লান্ত এতক্ষন ফ্লাইট জার্নি করে ! বলে রাখি কেউ আমরা ক্লান্ত তেমন ছিলাম না। আমাদের জিজ্ঞাসা ও করে নি ক্লান্ত কিনা ! টুর ম্যানেজার নিজের মুখের ও মনের কথা আমাদের মুখে বসিয়ে দিয়ে নিজে নিজে বলতেন। এটা ওদের একটা ব্যাবসা’র কৌশল।এইবারে সোজা হোটেল। হোটেল এ গিয়ে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ৫.৪৫ মিনিটে হাজির হবো লবিতে। গিজা পিরামিডে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখতে।
হোটেল এ ঢুকলাম। বিরাট পরিসর নিয়ে হোটেল তৈরি। হোটেল এর নাম Pyramid Park Resort..বেশ ভালো হোটেল ৫ তারা। হোটেল এ ঢুকতে ঢুকতেই আমাদের জবা ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি একটা Welcome Drink লাল রং এর পান করে ভালই লাগলো। প্রথমে আমার বাবার সঙ্গে মজা করলাম এটা ওয়াইন বলে। বাবা তো কিছুতেই খাবে না। যাক অনেক জোর করার পর খেলো। বাবাকে বোঝালাম মিশর Non Alcoholic Country… মিশর এর লোকেরা কেও মদ খায় না কেও শুয়োরের মাংস খায় না। একমাত্র রেষ্টুরেন্ট গুলোতে কিছু কিছু বার বড়ো বড়ো হোটেল এ পাওয়া যায় মদ বিদেশিদের জন্য। এই সব খাবার পর্ব শেষ করে টুর ম্যানেজার পাসপোর্ট সবার চাইলো। আমরা আগেই শুনেছিলাম হোটেল এর রুমে কোনো wifi কানেকশন দেবে না।। হোটেলের লবি তে পাবো। ফ্রি তে wifi পাবার লোভে যে যার মোবাইল বের করে শুরু করলাম যুদ্ধ। তারপর টুর ম্যানেজার রুম এর চাবি দিয়ে বললো ব্যাগ এর উপর রুম নম্বর লিখে দিতে। লাগেজ হোটেল কর্তৃপক্ষ পৌঁছে দেবে রুমে। বিরাট হোটেল এর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে সময় অনেকখানি লাগে। রুমে ঢুকলাম লাগেজ দেখি আগেই পৌঁছে দাড়িয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম। আবার বাসে চেপে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখতে গেলাম ইতিহাসের বইয়ের পাতায় পড়া পিরামিড। অর্ধেক কথা বুঝলাম অর্ধেক বুঝলাম না ।
দেখলাম ছবি তুলি কাজে দেবে। এক ঘণ্টার শো হয়। সন্ধ্যে ৭ টা থেকে ৮ টা অব্দি। ৮ টা থেকে ৯ টা অব্দি।আমরা সন্ধ্যে ৭ টা থেকে ৮ তার শো তে গেছিলাম। বাসে উঠলাম হোটেলের দিকে রওনা হলাম। একেবারে হোটেলের রাতের খাবার, এইবারও ওই টাইপ খাওয়া। কোনো রকম খেয়ে রুমে পৌছে ফ্রেশ হয়ে সোজা ঘুমের দেশের । কেননা পরের দিন যাবো আলেকজান্দ্রিয়া । সকালে উঠতে হবে ভোর ৫ টায় । ব্রেকফাস্ট ৬ টায় করে ৬.৪৫ এ হাজির হতে হবে বাসে।
(ক্রমশ )
Facebook: News Social Barta 24×7