মলয় দে, নদীয়া :- মৃত্যুর পর হিন্দু ধর্মে মৃত দেহ দাহ করার রীতি থাকলেও বৈষ্ণবদের সমাধিস্থ করা হয় মৃতদেহ ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসিয়ে রেখে। আগুন জল এবং বাতাস দেবতা জ্ঞানে পূজিত হওয়ার কারণে পার্সিদের মৃতদেহ বেশ উঁচু একটি টাওয়ারে রাখা হয় চিল বা অন্যান্য পাখিদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে। হিন্দুদের সতীদাহর মত কুপ্রথার অবসানের পথে তারাও বর্তমানে সমাধিস্থর পথে। ক্রিশ্চিয়ান এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পদ্ধতিগত কিছু বৈষম্য থাকলেও মাটির তলায় মৃতদেহ রাখা হয়।
নদীয়ার শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায় মুসলমান ধর্মালম্বী বসবাস করলেও ডাকঘর এবং সুত্রাগড় অঞ্চলে বেশিরভাগ লক্ষ্য করা যেতো! সেসময় জনসংখ্যার নিরিখে কবরস্থানের সংখ্যা ঠিকঠাক থাকলেও বর্তমানে প্রয়োজনের থেকে বেশ খানিকটাই কম। নদীয়া শান্তিপুর রামনগর মিস্ত্রীপাড়া মন্ডল মসজিদ এবং বুড়ো মসজিদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় আনসার আলীর উদ্যোগে কবরস্থানে পবিত্রতা বজায় রাখা এবং প্রাচীর নির্মাণ, তোরণ নির্মাণ এর মতন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছে। আনসার আলী জানান “দেশভাগের আগে ললিত শেখ নামে এই এলাকায় কেউ বাস করতেন! দেশভাগের কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে তিনি আমাদের পূর্ব পুরুষের কাছে দলিল রেখে যান। তারপর থেকে প্রায় পাঁচ পুরুষ চলে গেলেও এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি, বা আমরাও খুঁজে পাইনি তাদের। আমার বাবা আকবর আলী ছিলেন এইকবরস্থান এবং দুটি মসজিদের মতোয়ালি। ব্যক্তি মালিকানায় থাকায় কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা ৫৪ শতক জায়গা প্রাচীর নির্মাণ, তোরন তৈরি করা এবং কবরস্থ করার পরিষেবা দেবার মতন খরচ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই সহজেই মানুষের কাছে আমি সাহায্য প্রার্থী।”
এলাকা সূত্রে জানা যায় ওই এলাকার আবুল শেখের মতন অনেকেই সামান্য ১০০ টাকা পারিশ্রমিক এর ভিত্তিতে কখনোবা বিনা পারিশ্রমিকেও মসজিদ নির্মাণের কাজে এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় মাস্টারমশাই সাবির আহমেদ কবরস্থানের তরুণ তৈরি করার সিমেন্ট কিনে দিয়েছেন। ইটভাটার মালিক সাহেব মন্ডল যুগিয়েছেন বেশকিছু ইঁট। ওই এলাকার প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন কাজের মজুরি থেকে একটি সামান্য অংশ জমাচ্ছেন শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ এই কবরস্থানের কাজে ব্যাঘাত না ঘটায় জন্য। অন্য ধর্মের বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষও তাদের সাধ্যমত সহযোগিতা করছেন বলেই জানা গেছে।