সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে, শোকস্তব্ধ নদীয়া, বাল্যকালের সঙ্গীদের স্মৃতিচারণা

Social

মলয় দে, নদীয়া:- বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শিলাইদহর কয়া গ্রামে চাটুজ্জে পরিবার, এদেশে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের গোয়াড়ির সোনাপট্টি এলাকায় আসেন স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে। ১৯৩৫ সালের ১৯ শে জানুয়ারি, মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং আশা লতা চট্টোপাধ্যায়ের কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেসময় কৃষ্ণনগর নাট্যচর্চার পীঠস্থান ছিল। কৃষ্ণনগরের সিএমসি স্কুলে পড়াশোনার সময়ই নাটকের প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা মোহিত বাবু নাটক শেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। তিনি অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের ওকালতির পেশার সাথে যুক্ত থাকায় বেশিরভাগ সময়ে থাকতেন মির্জাপুর স্ট্রিটের বাড়িতে। এরপর কলকাতার কলেজে অনার্স নিয়ে পড়াশোনার সময় নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ী সাথে যোগাযোগ হয় সৌমিত্র বাবুর। তখন থেকেই তিনি জীবনের মূলমন্ত্র হিসাবে নাট্যচর্চাকে স্থান দেন। কলকাতার স্টার থিয়েটারে ১৯৬৩ সালে তাপসী নাটকের মধ্যে দিয়ে থিয়েটারে প্রবেশ।

চলচ্চিত্রে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ১৯৫৯ সালে। এরপর সত্যজিৎ বাবুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৪ টি ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
প্রবন্ধ কবিতা বিভিন্ন নাটকের বই লিখেও আলোড়ন ফেলেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত ১৯৬১ সালে এক্ষন নামে সংস্কৃতি বিষয়ক একটি পত্রিকার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন তৎকালীন সংস্কৃতি প্রেমীরা।

চলচ্চিত্রবিষয়ক ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান “পদ্মভূষণ” ২০০৪ সালে এবং “দাদাসাহেব ফালকে” ২০১২ সালে তার মুকুটেই শোভিত হয়েছিলো। শুধু দেশ নয় বিদেশেও তার নাট্যচর্চা অভিনয়ে দক্ষতা নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন বহুবার।

নাট্যশিল্পী তার অবদানের ফরাসি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রালয় থেকে ১৯৯৯ সালের “commandeur de I ordre des arts et des Letters” সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্যাথরিন বার্জ তার জীবন নিয়ে তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত তথ্যচিত্র “গাছ”। ২০১৭ সালে ফরাসি সরকার লিজিয়ন অফ অনার এ ভূষিত করেন তাঁকে।
গত ৫ই অক্টোবর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আছে তাঁর, দু’সপ্তাহের মধ্যে করোনা থেকে মুক্তি পেলেও শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা বৃদ্ধি পায়। কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করলেও রবিবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায় পুত্র সৌগত চট্টোপাধ্যায়, কন্যা পৌলমী চট্টোপাধ্যায় বসু সহ পুরো চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সাথে সারা ভারত তথা বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলভিউ নার্সিংহোমে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন। আমরা খোঁজ নিয়েছিলাম তার কৃষ্ণনগরের বাড়িতে! সোনাপট্টির সেই বাড়িটা বর্তমানে সিপিআইএম কার্যালয়! যতদূর জানা যায় তার সম্মতিতেই । তবে সেই সময়ের তাঁর এক বান্ধবী যিনি গত ১০ দিন আগে ফোনে খবর নিয়েছিলেন শারীরিক, মাঝে মাঝে কথা হতো সৌমিত্র বাবুর সাথে এবং বাড়ির সামনেই আরেক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারা গেলো তিনি অবসর পেলেই চলে আসতেন এই বাড়িতে, গল্প করতেন সেসময় পুরনো বন্ধু বান্ধবদের সাথে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছেন আমাদের পলু আর ফিরবে না।

Leave a Reply