মলয় দে, নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গোপাল পুরের বাসিন্দা ৭৫ বছরের কার্তিক চন্দ্র পাল ঠাকুর বানানোর প্রাথমিক শিক্ষা নেন মা-বাবার কাছ থেকেই। তাঁর স্মৃতি অনুযায়ী পারিবারিক আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পাঁচ পুরুষের ঠাকুর বানানোর কথা অনেকটাই জানেন তিনি। পরবর্তীতে ১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে কুমারটুলিতে উন্নতশিক্ষার জন্য বেশ কয়েক বছর কাটান তিনি। এরপর গোপালপুরের নিজ বাসভবন থেকে তাঁর হাতে তৈরি দেবতাদের স্থান হয়েছে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও। তাঁর মতে বড় ঠাকুর বানানোর থেকে, ছোট ঠাকুর বানানোতে প্রয়োজন হয় শিল্প দক্ষতা, সময়ের সাথে বেশ খানিকটা ধৈর্য্য এবং তুলনামূলকভাবে কম মজুরিপ্রাপ্তিতেও সৃষ্টিসুখ-এর আনন্দ র মতো বিষয়গুলো মেনে নিয়ে খুব কম সংখ্যক মৃৎশিল্পী এ ধরনের কাজ করে থাকে।
গত বছরেও এ ধরনের তিনটি ঠাকুরের অর্ডার পেয়েছিলেন তিনি। করোনা আবহে গণপরিবহনে বিভ্রাট হতে পারে বলেই হয়তো অর্ডার দেননি এবছর। তবে আমেরিকার প্রবাসী এক বাঙালি পরিবার আজ প্রায় কুড়ি বছর ধরে কার্তিক বাবুর কাছ থেকে প্রতিমা নিয়ে সুদূর আমেরিকাতেও বছরে একবার হলেও সকল বাঙ্গালীদের এক জায়গায় করতে পারেন পুজোর কদিন। আমেরিকা প্রবাসী ওই বাঙালি পরিবারের একসময় শান্তিপুরের বাস ছিলো তাই হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে করোনা আবহ ভুলেই এবছরের ঝুঁকি নিয়েছেন ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার। তবে শান্তিপুর নয় এ বছর দমদম এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করবেন বলে জানা যায় মৃৎশিল্পী সূত্রে। আজ মহালয়া হয়তো এই অতিমারি পরিস্থিতির জন্য এবছর দৈবিক ভাবেই ” ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্য” প্রচলিত কথা অনুযায়ী এক মাস ছয় দিন বাদে পুজো! হয়তো ভক্তবৃন্দের শারীরিক মানসিক আর্থিক সব দিক থেকেই প্রস্তুত হওয়ার জন্যই এবছর পেয়েছে বেশ খানিকটা সময়। সরাসরি সাক্ষাৎ না হলেও আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের দুর্গাপুজো নিয়ে উচ্ছ্বাস যে আমাদের থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং বেশ খানিকটা বেশি তা বোঝা গেলো বর্তমান প্রযুক্তির ভিডিও কলের কল্যাণে।