মলয় দে নদীয়া :-ভিড় ট্রেনে কত অবহেলা করেছি তাদের! হকার নামে পরিচিত তারা। কতো বিচিত্র ভঙ্গি তাঁদের,কতো বৈচিত্রের সমাহার।
কেউ কেউ বাচন ভঙ্গি আর স্টাইলে হয়ে ওঠেন অনন্য। তাঁদের মার্কেটিং ম্যানেজার নেই, নিজেরাই তৈরী করেন বিপণনের নানান চিত্তাকর্ষক পদ্ধতি বিচিত্র অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে আসেন ট্রেনের হকার দল। কতো বিচিত্র জিনিস, কতো আকর্ষণীয় বাচন ভঙ্গি। দেবো নাকি দাদা, ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে? কচি শশা। অথবা এই যে দাদারা ছারপোকার বাচ্চারা, বিছের বংশরা, যদি আপনাকে কামড়ায়, লাগান এই বিষহরি তেল। বলার গুণে কামরার হট্টগোল যায় থেমে, আকর্ষণ করার ক্ষমতা আর রসবোধ দেখে অবাক হতে হয়।
কেনা বেচার সম্পর্ক ছাড়িয়ে অনেকেই হয়ে ওঠেন প্রাণের বন্ধু। খবরাখবর নেন, ভালো আমটা লেবুটা বেছে দেন। ভাঁড় শেষ হবার পর ঢেলে দেন ভালোবাসার ফ্রী চা।
অনেক দিন দেখিনা তাঁদের। ট্রেন বন্ধ হয়েছে আড়াই মাস পেরিয়ে গেলো। জানিনা কোথায় কেমন আছেন তাঁরা? পরিবারে শত অভাবের অভিযোগে অভিযুক্ত ট্রেন কম্পার্টমেন্টে এসে নিজেকে সম্পূর্ণ পাল্টে আবারও যাত্রীদের মনোরঞ্জন। মাশরুমের বিক্রেতার ঘরের ভাত কিভাবে আসছে? চালের পাঁপড় বিক্রেতার ঘরে চাল,আর ঘরের চালের খবর কী? বয়স্ক লজেন্স দাদু নিজেই বুঝি ঠকে যাচ্ছেন রোজ। পাঁচ টাকার দেশ পত্রিকা বেচা মানুষটার খবর কী রাখে দেশ? মজা করে ধান বেচে পয়সা বলা মানুষটার ঘটি বাটি বেচতে হচ্ছে না তো? তাঁরা সবাই আকুল হয়ে তাকিয়ে আছেন শূন্য রেল কামরার দিকে। রেল চললেই চলে তাঁদের সংসার। অচল সংসারের চাকাটা বড়ো ভারী লাগে, টানা বড়ো কষ্টকর। জানিনা কেমন আছেন সেই স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা। বড়ো দুঃসময়। কেউ নেয়নি খোঁজ! তাই চাতকের মত অপেক্ষায় রয়েছেন সিগন্যাল পোস্টের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়!