মলয় দে নদীয়া:- একটি জরায়ুর বিভক্ত দুটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে বেড়ে ওঠা দুই সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করার বিরল অপারেশনের ডাক্তারি নাম বাইকর্ণ্যুয়েট ইউট্রাস ইউনিকলিস সার্ভিক্স টুইন প্রেগনেন্সি।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অপারেশন, মেডিকেল জার্নালে লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১৭ তম অর্থাৎ এ বাংলায় প্রথম লক্ষ্য করা যায় গত বছর ২০২২ এর ৫ই জুলাই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। মামনি বিবি নামে এক সন্তান সম্ভবা মায়ের, গর্ভ থেকে একটি পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ করেন শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গাইনোকলজিস্ট ডঃ পবিত্র ব্যাপারী।
এরপর আজ আবারো একই অপারেশন করেন , প্রসূতিমা এবং দুই পুত্র সন্তানের সুস্থতার সাথে।
তবে ব্লাড ব্যাংক , আই সি ইউ বাচ্চাদের এস এন সি ইউ
না থাকা সত্বেও এই ঝুঁকিপূর্ণ জটিল অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেন ডক্টর বেপারী।
মা এবং দুই সন্তানের সুস্থতা দেখে খুশি পরিবার থেকে এলাকাবাসী, হাসপাতালের সকল ডাক্তার নার্স এবং কর্মীরাও।
শান্তিপুর ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের নৃসিংহ পুর বড় ডাঙ্গাপাড়া র বাসিন্দা, জিতেন্দ্র মণ্ডল পেশায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন কলকাতায়। ২০২০ সালে বিবাহের পর, গর্ভপাত ঘটে। ডি ই করার পর , চিকিৎসকের পরামর্শ মতন দু’বছর বাদে আবারো, তার স্ত্রী অর্পিতা দেবী সন্তানসম্ভবা হন। তবে কলকাতায় কাজের সুবাদে তিনি ইএস এস আই হাসপাতালের এক সার্জেন্টের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, এ ধরনের অপারশনের জটিল তত্ত্ব। সুদূর কলকাতায় না গিয়ে বাড়ির কাছে শান্তিপুর হাসপাতালে এ ধরনের অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কারণে তিনি যোগাযোগ করেন ডঃ পবিত্র ব্যপারীর সাথে। তাঁর পরামর্শ মতই আজ, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বেলা বারোটা নাগাদ প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করার , দু’ঘণ্টার মধ্যে তাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ এক ঘন্টা শোনা যায় সুখবর।
ডক্টর ব্যাপারী জানান, জরায়ুর একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে একটি বাচ্চা উল্টো যার ওজন ২ কেজি ১৫০ গ্রাম, অপরটি সোজা যার ওজন এক কেজি ৮৭০ গ্রাম। মায়ের ব্লাডপ্রেশার অনেকটাই বেশি থাকার কারণে, একটু দুশ্চিন্তায় ছিলেন বটে তবে এবি পজেটিভ রক্ত তার জন্য মজুদ করে রাখা ছিলো। গোটা বিষয়টি হাসপাতাল সুপারেন্টেন্ড ড: তারক বর্মনের অনুমতি এবং পরামর্শ মতো তিনি করেছেন বলে জানিয়েছেন আমাদের। এই বাংলায় দ্বিতীয় অপারেশনও তার হাতে এবং শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেই, বিষয়টি কাকতালিও হলেও, অত্যন্ত খুশির এবং গর্বের বলে তিনি মনে করেন। আর এই সফলতা, সমগ্র হাসপাতালের বিশেষত প্রসূতি বিভাগের সমস্ত নার্স , এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিম ওয়ার্কের ফল বলেই মনে করেন। তবে তিনি, পেডিট্রিশিয়ান ডক্টর অরূপ বাসু, এবং অজ্ঞানের ডাক্তার টিনামনি বিশ্বাসের অত্যন্ত সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপারেন্টেন্ড ড: তারক বর্মন, একের পর এক সফলতার জন্য ডক্টর বেপারী সহ প্রসূতি বিভাগের ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন এভাবেই হাসপাতালের প্রতি আস্থা বাড়বে সাধারণ মানুষের। তবে অন্যান্য বিভাগও যথেষ্ট দায়িত্বশীল বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে নবজাতক দুই পুত্রের পিতা, জিতেন্দ্র মন্ডল জানান, অনেক সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটে হাসপাতালের উপর নানান আক্রমণ নেমে আসে তবে তারাই যে ভগবান , তা তিনি বুঝলেন আরো একবার। আমাদের ক্যামেরার সামনে খুশিতে অঝরে কেঁদ ফেললেন তিনি, বললেন অসুস্থতার কারণে স্ত্রীকে বাঁচিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন তা ভাবেননি, সে জায়গায় সুস্থ স্ত্রীর সাথে, সুস্থ ফুটফুটে দুই পুত্র সন্তান যাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের। যা শুধুমাত্র ভগবানরুপী ডাক্তাররাই দিতে পারেন।