আমফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত নদীয়ার অধিকাংশ এলাকা মাথায় হাত চাষীদের

Social

সোশ্যাল বার্তা : একদিকে করোনা আবহ অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তীব্র গতিতে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফান। একটা সময় এমন পরিস্থিতি হয় যে স্থলভাগে ঢুকতেই গতি ধারণ করে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। এরপরই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের উপর দিয়ে বয়ে যায় এই আমফান ঝড় ।

সেইসময় ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল প্রায় ১১০-১৩০কিমি প্রতি ঘন্টায়। টানা চার ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল আমফানের তান্ডব ।তীব্র গতিতে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি।এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।

আগাম থেকেই নদীয়া জেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমফানের জন্য স্পেশাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয় । সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানানো হয় । প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা রাত জেগে পুরো বিষয়ের উপর নজর রাখেন ।

কিন্তু আমফানের তাণ্ডবে একটা সময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নদীয়া জেলার অধিকাংশ এলাকা। রাত ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে আমফান তান্ডব চালায় । আমফানের জেরে গাছ উপড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় । হাঁসখালি থানার বগুলার হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তা, কৃষ্ণনগর শহরের ঘূর্ণির মধু চৌধুরী যাওয়ার লেন , শক্তিনগর সুরেশ সরকার রোড, শান্তিপুরের হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তা , মতিগঞ্জ এর মোড় ফুলিয়া বাইপাস , নবদ্বীপ পোড়ামাতলা মূল মন্দিরের বটগাছ উপরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দির সহ একাধিক দোকান । কল্যাণী ও করিমপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ।

কৃষ্ণনগর শহরের অনেক জায়গাতেই ভেঙে পড়েছে লাইট পোস্টও ও ছিঁড়ে পড়ে রাস্তায় বিদ্যুতের তার । কালীনগর পন্ডব মোড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রাস্তার উপরে। বুধবার রাত থেকেই গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় উড়ে গিয়েছে ঘরের চাল। কৃষ্ণনগর ১ নং ব্লকের যাত্রাপুর গ্রামে একটি ঘরের উপরে গাছ পড়ে তবে কেউ আহত হননি । কৃষ্ণনগর ২ নং ব্লকের পন্ডিতপুর ও কৃষ্ণচন্দ্রপুর এলাকায় প্রবল ক্ষতি হয়েছে । চালা ঘর ভেঙে পড়ে । ঝড়ের তাণ্ডবে শান্তিপুরের তিন জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে ।

বুধবার নদীয়া জেলাকে কার্যত তছনছ করে দিয়েছে আমফান ঘূর্ণিঝড় ।ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সর্বনাশ হয়েছে কৃষকদের নষ্ট হয়েছে কলা ও ধান। ঝড়ো হাওয়া মুড়িয়ে দিয়েছে সোনার ফসলকে। তাই মাথায় হাত চাষীদের ।

এবছর আম ও লিচুর ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু করোনার জন্য আম ও লিচু বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চাষীরা। লক ডাউন কবে উঠবে তাও অজানা । একেই করোনা তার উপর এসে পড়ল আমফান। ফলে আম, কলা ও লিচুর ফলন ভালো হলেও আমফানের জেরে তা সবই ঝড়ে ঝরে গেছে বা যা আছে তাও পচন ধরার সম্ভাবনা । ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়লেন কলা, আম ও লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা ।

জেলার অনেক জায়গায় বিঘার উপরে বিঘা ফলন্ত কলার বাগান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে । মাথায় হাত কলা চাষীদের । কৃষ্ণনগরের পাশে কালিনগরের এক কৃষক আক্ষেপ করে বললেন “আমার চার বিঘা জমির কলাবাগান । আর কিছুদিন পরে কলা তোলার সময় কিন্তু সব শেষ করে দিল আমফান ।”

তবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকাতেই রাত থেকেই বিদ্যুৎ দপ্তর , প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। সরকারের পাশাপাশি কাজে লেগে পড়েছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও ।

Leave a Reply