লকডাউনে জন্তুরা স্বস্তিতে, আর্থিক ক্ষতি বন দফতরের

Social

নিজস্ব সংবাদদাতা , রায়গঞ্জঃ লকডাউনের জেরে টুরিস্টদের আসা বন্ধ প্রায় মাস দেড়েক ধরে। বন্য নীরবতায় এখানকার প্রাণীরা যেন অনেকটাই স্বস্তিতে। রায়গঞ্জের কুলিক পাখিরালয়ে বন্যপ্রাণী এবং বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা রয়েছে। এতে খুশি বনদপ্তরের কর্মী থেকে শুরু করে আধিকারিকরা। প্রতি বছর মে-জুন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে কুলিক পাখিরালয়ে হাজির হয় পরিযায়ী পাখির দল। কুলিক ফরেস্টের ভেতরে রয়েছে কুলিক নদীর ক্যানেল। সেখানে পরিযায়ী পাখিদের জন্য ইতিমধ্যে মাছ ও শামুক ছাড়া হয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা এখানে এসে বাসা বাঁধে কয়েক মাস থেকে ফের ভিনদেশে পাড়ি দেয়। সামনেই বর্ষা। তবে এখনও পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু না হলেও দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীদের আশা এবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে। কারন, কুলিকের ক্যানেলে পাখিদের খাবার ছাড়া হয়েছে। এদিকে, লকডাউন খুলে গেলে পর্যটকদের চেনা কুলিক অনেকটা অচেনা চেহারায় দেখতে পাবেন। পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোয় কুলিক পক্ষীনিবাসের আকর্ষণ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে বিভিন্ন ছুটির দিনগুলিতে পর্যটকদের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। এ বছর ১ জানুয়ারি, একদিনে প্রায় দুই হাজার মানুষ সংরক্ষিত এলাকায় ভ্রমণে এসেছিলেন। বনদপ্তর একদিনের টিকিট বিক্রি করে আয় করেছিল প্রায় ৭০,০০০ টাকা। তার আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রায় ৩০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেছে বন দপ্তর।

শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কাছে গত প্রায় এক বছরে কুলিক পক্ষীনিবাস আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থল হয়ে উঠেছে। কুলিক পক্ষীনিবাসে থাকা অ্যানিমাল কাউন্টার থেকে অন্যান্য সবকিছু ঘুরে দেখতে অন্তত চার ঘণ্টা সময় লাগছে। ফলে ছোটো ছোটো শিশুদের বন্যপ্রাণী পাখি বনাঞ্চলের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে অনেকেই ছুটে আসছেন। আগে মূলত পরিযায়ী পাখিরাই কুলিকের আকর্ষণ ছিল। কিন্তু বছর চারেকে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। রাযগঞ্জের ডিএফও সোমনাথ সরকার জানিয়েছেন, কুলিক পক্ষীনিবাস পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাখি, বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে ঠিক রেখে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। কুলিকের বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে বেশকিছু পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছে রাজ্য সরকার। পক্ষীনিবাসের ভেতরে বিদেশি নানা প্রজাতির পাখিদের একটি বিশাল আকার খাঁচা তৈরি করা হয়েছে।

এই পাখিরালয়ে ভেতরে যেন আরেকটি পাখিরালয় উঠে এসেছে। সেখানেই একটি ঘরে বহু খরগোশ উদ্ধার করে রাখা হয়েছে। বনকর্মীরা খরগোশগুলির লালনপালন করছেন। রঙিন মাছের বিশাল অ্যাকুয়ারিয়াম ছাড়াও দেশি প্রজাতির প্রায় ৩৫ ধরনের মাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। একটি পুকুরের ধারে দেখা মিলবে অস্ট্রেলিয়ান অতিথি পাখি এমুর। জলের ধারে বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপের দেখা মিলবে। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে নীলগাইয়ের। মাস চারেক আগে এগুলিকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। করণদিঘি থানা লোকালয় থেকে কিছুদিন আগে একটি ময়ূর উদ্ধার করা হয়েছিল। যা কুলিকের নতুন অতিথি। পক্ষীনিবাসে প্রায় ১০০ টি কোয়েল পাখিরও দেখা মিলবে। কুলিক ফরেস্টের মূল গেটের দিকে যেতেই একটি ঘরে পর্যটকদের জন্য টেলিভিশনের পর্দায় ২৪ মিটারের একটি তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুলিকের খুঁটিনাটি তথ্য সেখানে ফুটিযে তোলা হয়েছে। এখানে হরেকরকমের প্রজাপতি দেখার সুযোগ রয়েছে। পশু, পাখি, মাছ প্রজাপতি অরণ্যের সুন্দর যে কুলিকের কৌলিন্য আরো বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ দিনগুলি বাদ দিয়ে আগে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশো জন পর্যটক আসতেন। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়েছে। এখন প্রতিদিন তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো জন আসেন কুলিকে সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

Leave a Reply