ইছামতী নদীতে ভারত-বাংলাদেশের প্রতিমা বিসর্জন মনে রইল আক্ষেপ

Social

কল্যাণাশীষ জোয়ারদার:বসিরহাট শহরের ইছামতি নদীতে গত মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন স্বামীর ঘরে। ঢাকের বাদ্য,উলুধ্বনি আর সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার বিসর্জন হলো। প্রতিমা বিসর্জনের আগে মন্ডপে মণ্ডপে চলল সিঁদুর খেলা সঙ্গে আনন্দ উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা দেবী প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন ,নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পড়াচ্ছেন , চলল মিষ্টিমুখ করানো,ছবি তোলা ও ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। বিভিন্ন মন্ডপ থেকে ট্রাক বা পিক আপ  ভ্যানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে জড়ো হয় ইছামতি নদীর তীরে ঘাটে। এর পর একে একে দুর্গা প্রতিমা নৌকায় তুলে নদীবক্ষে শুরু হয় পরিক্রমা। নদীর দুই তীরে জনসমুদ্র।

হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশা-পাশি অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সব্বাই সার্বজনীন দুগোৎসবের আনন্দ  ভাগকরে নেয়। এদেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় পারস্পারিক সহাবস্হান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে ।এটা বাঙালির চিরন্তন এতিহ্য ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। দুগোৎসবের সঙ্গে বাংলার প্রকৃতির ও রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। শরতের শুভ্র কাশ ফুলের সতো মানব প্রানে ও পূণ্যের শ্বেত শুভ্র পুষ্পরাশি প্রস্ফুটিত হোক।অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা–বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার কাছে এটাই প্রত্যাশা।

সীমান্তবর্তী শহর বসিরহাট। এই শহরে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের ধুমধাম কয়েক যুগধরে চলে আসছে। দশমীর দিন দুই দেশের মানুষ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়,ইছামতী নদীর বুকে। ওপারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার দেবহাটার টাউন শ্রীপুর ,এপারে ভারতের বসিরহাট । আগে দুই দেশের মানুষ দুর্গা প্রতিমা নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন। তারপর নিজ নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে নৌকায় চড়ে প্রতিমা বিসর্জন চলতো।এদেশের নৌকা ও দেশের মানুষ,এপার-ওপারের মানুষ মিলে মিশে একাকার হয়ে যেতেন।আনন্দে মেতে উঠতো পুরো ইছামতি। বিসর্জনের পর দু-দেশের মানুষ নিজের নিজের ঘরে ফিরে যেতেন। এটাই ছিল পরম্পরা,দীর্ঘ কালের রীতি। এই একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। শুধু তাই নয়,দুর-দুরান্ত থেকে পর্যটক রা এসে হাজির হতেন বিসর্জনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে।

গতবছর নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল। এ বছর একে বারেই আঁটো-সাঁটো তার ঘেরাটোপ,মাছি যেন না গলে। মুখ দেখা-দেখি বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়।প্রশাসনের কড়া নির্দেশ, বিসর্জনের মাধ্যমে কোন রকম ভাবেই যেন অনুপ্রবেশ না ঘটে। সম্পূর্ণ হারিয়ে গেল ইছামতী নদীর বিসর্জনের ইতিহাস।ঐতিহ্য আজ  মলিন,ধূসর। এদিনও অনেক পর্যটক হাজির হয়ে ছিলেন,ফিরলেন একরাশ  হতাশ নিয়ে ।