আমি বাঁকুড়া জেলার মানুষ। যাকে বলে আদ্যন্ত বাঁকড়ি। তাই নিজের দেশের গুণকীর্তন যখন শুরু করেছি, একটু বড়ো তো হবেই। একটু ক্ষমা ঘেন্না করে নেবেন।
এমনিতে বাঁকুড়া হল একটি ছোট্ট জেলা। তার আবার ততোধিক ক্ষুদ্র এক গ্রাম কেঞ্জাকুড়া। কিন্তু এই মুহুর্তে সেখানকার দুটি জিনিস, কলকাতাকে তো বটেই, ভারতের যেকোন জায়গাকে গুনে গুনে দশ গোল দিয়ে দেবে। তা হল এখানকার জিলিপি আর কালোজাম।
প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তির দিনে, শুধুমাত্র ভাদুপূজা উপলক্ষে এই রাজকীয় বস্তুগুলির আবির্ভাব হয়। জিলিপিগুলি, এক একটি এক কেজি থেকে শুরু করে তিন চার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে (১২০ টাকা প্রতি কেজি )। আর কালোজাম এক একটি প্রায় পাঁচশো (১৬০ টাকা প্রতি কেজি )। তবে ভাববেন না যে শুধুই দেখনশোভা, খেতেও কিন্তু তেমনই মজাদার, সুস্বাদু ও বটে । টাটকা অবস্থায় তো বটেই, জিলিপিগুলি তিন চারদিন পর্যন্তও বেশ ভালো থাকে। কালোজামগুলিও তাই।
এই উৎসব উপলক্ষে, এখানকার মানুষেরা, দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাদের আত্মীয় কুটুম্বদের বাড়িতে, এই জিলিপি, কালোজাম উপহার হিসেবে পাঠিয়ে থাকেন। কারিগররাও তাই সেভাবেই যত্ন নিয়ে মিষ্টিগুলি তৈরি করেন ।ওনারা প্যাকও করে দেন সুন্দর ভাবে ।
আসলে ছোট থেকে এসব গল্প শুনে শুনে এবার আমি প্রতিজ্ঞাই করেছিলাম ( বাবা মা কেন যে আগে কিনে দেয় নি কে জানে!), যে এবার আমার চক্ষু এবং জিহ্বার আক্ষেপ দুর করবই। তো অবশেষে আমার বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হল। আপনারাও চাইলে পেতে পারেন।অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ দু’চার দিন বানানো চলে, ওখানকার দোকানে দোকানে। তবে তারপরে আর পাবেন না। আবার পরের বছর পর্যন্ত অপেক্ষা।
- এবার যাতায়াত সম্বন্ধে দু’একটি কথা বলি। (নন-বাঁকড়িদের জন্য):
1) কেঞ্জাকুড়া যেতে হলে বাঁকুড়া যেতেই হবে।
2) বাঁকুড়া থেকে বাসে সরাসরি (ভায়া ছাতনা ) কেঞ্জাকুড়া যাওয়া যায়। একইভাবে ফেরা সম্ভব। তবে বাসের সংখ্যা খুব কম। আবার এই পথেই ছাতনায় ভেঙেও যাওয়া যায়। আরেকটি পথ আছে। তবে তাতে বাসের সংখ্যা আরো কম। বাঁকুড়া থেকে ট্রেকারে ছাতনা, ছাতনা থেকে পরের ট্রেকারে কেঞ্জাকুড়া। একইভাবে ফেরা। এই সার্ভিসটা ভীষণ ভালো।