মলয় দে নদীয়া:- মাছে ভাতে বাঙালির দেবী মাছে ভোগী হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। বলি প্রথা বিলোপ হওয়ার কারণে মাংস এখন খুব বেশি কালীপুজোয় লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু ধর্মপ্রাণ শান্তিপুরে প্রকাশ্যে বলি না হলেও আজও রয়েছে , নিরামিষ ভাবে অর্থাৎ পেঁয়াজ রসুন ছাড়াই আদা জিরে দিয়ে রান্না পাঁঠার মাংসের প্রসাদ।
গোস্বামী বাড়িগুলি বাদে বেশ কয়েকটি দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো অন্নপূর্ণা পুজোতে কোথাও খয়রা মাছের ঝাল, বোয়াল মাছের ঝোল ,ইলিশ মাছের টক প্রসাদ হিসেবে দেওয়ার রীতি আজও আছে।
আজ শান্তিপুর বড়বাজার সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন অন্নপূর্ণা পূজোর পঞ্চম দিন। এ বছর ১৬৯ বছরে পদার্পণ করেছে। বিগত পাঁচ দিন যাবত নানা পদে নিরামিষ দেওয়া হলেও নিয়ম অনুযায়ী আজ শান্তিপুর মালোপাড়ায় অবস্থিত তাঁর নিজস্ব পুকুরের মাছ ভাজা মধ্যাহ্নে সেবা করে বিকেলে দধিকর্মা খেয়ে তবেই রওনা দেওয়ার কথা।
কিন্তু, এই পুজো বর্তমানে বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির তত্ত্বাবধানে পুজো হলেও বহু পূর্বে, গোপালপুর নিবাসী সাহা পরিবারের পুজো ছিলো। তাদের পরিবারের এক সদস্য আজকের দিনে মারা যাওয়ার কারণে, বিসর্জন বন্ধ থাকে। অর্থাৎ পঞ্চম দিনের বদলে ষষ্ঠ দিনে বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই একদিন পরিবারের সকলে যেহেতু হভিষ্যান্ন , সেই কারণে পরিবার সদস্য হিসেবে মা অন্নপূর্ণার প্রসাদও প্রস্তুত হয় কাঠের জলে মাটির হাঁড়িতে তেল মসলা ছাড়াই দোলো নুন, ঘি এবং বিভিন্ন আনাজ, মটরের ডাল, সেদ্ধ সহযোগে।
দেবীর পুজোয় আমিষ কেনো? এই প্রসঙ্গে শাস্ত্রমতে কোন ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও পরিবারের আবেগের পরম্পরাই, এখন ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে মূল মন্দিরে, প্রবেশ করানো হয় না এই মাছ।
মন্দির সংলগ্ন মূল ঠাকুর ঘরের বাইরে রান্না হওয়ার পর, ঠাকুর ঘর থেকে মাটির সরা মালসা হাড়ির পড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় একটি করে মাছ ভাজা।
পুজো উদ্যোক্তারা জানান, সারা বছরের জন্য জল কর ইজারা দেওয়ার সময়েই, উল্লেখ থাকে পুজোর ন্যূনতম ৪০ কেজি রুই কাতলা মাছের যোগান দেওয়ার জন্য। যেহেতু দু’বছর করো না পরিস্থিতিতে বন্ধ ছিল তাই এবার, আরো ১২ কেজি মাছ কেনা হয়েছে বাজার থেকে।
শান্তিপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্যান্য দিনে চার পাঁচশ ভক্তবৃন্দ প্রসাদ গ্রহণ করতে আসলেও, আজ মাছ ভোগের টানে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
তারা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র তারাই নন, ওই প্রসাদ নিয়ে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন পরিজন সকলকে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়। তাই আজ সকাল থেকেই সাজু সাজসাজ রব অন্নপূর্ণা তলায়।