মলয় দে নদীয়া:-অতি প্রাচীন কাল থেকেই সামাজিক বিভিন্ন বার্তা, ধর্মীয় মোড়কে বিধান হিসেবে দেওয়ার পেছনে কারণ ছিল যথেষ্ট। সহজ কথা সহজে না বুঝলে, আঙ্গুল ব্যঁকাতে হয় বৈকি! তাইতো প্রায় প্রত্যেক দেবদেবীর সাথেই একটি করে প্রাণী কখনো বাহক রূপে কখনো বা সরাসরি পূজিত হওয়ার ব্যবস্থা সৃষ্টির সময় থেকেই। চিরকালই চটকদারি বাহ্যিক মোড়কের উপর বিশ্বাসী আমরা। চিকিৎসা শাস্ত্রে গাছের পাতা , মূল কান্ডের বাটা জোলাপ, রসের বদলে তেতো ওষুধের বর্তমান রূপ ক্যাপসুল।
জীব সেবাই শিব সেবা”বিখ্যাত উক্তিটি ব্যবহারিক প্রয়োগ কতটুকু?
আজ শিবচতুর্দশী, ধুতরা ফুল, আকুন্দ ফুল, গঙ্গাজল, দুধ রুদ্রাক্ষ, জোগাড় এবং ভক্তিভরে সেটা শিবলিঙ্গের প্রতি নিবেদন এর পেছনে কারণটির প্রতি কতখানি সচেতন আমরা! অথচ তারই বাহক রূপে থাকা দৃশ্যমান ষাঁড় বেশিরভাগ জায়গায় অবহেলিত অবস্থায় পশু চিকিৎসালয় থাকলেও চিকিৎসার অভাবে নানা ইনফেকশনজনিত কারনে মারা যাচ্ছে। জন্মদাত্রী দুগ্ধবতী গাই পুজিতে হয় মাতৃরূপে, বলদ এর ব্যবহার বর্তমানে কমে গেলেও এখনো কিছুটা প্রয়োজন আছে বলে অযত্ন খুব একটা চোখে পড়ে না, কিন্তু ষাঁড়? ধর্মীয় কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবিক অবস্থা বড়ই করুণ। মাতৃ কেন্দ্রিক সন্তান প্রতিপালনে, পিতার ভূমিকায় বিতর্ক থাকলেও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার কারণে নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে প্রয়োজন উভয়কেই।
এত অন্ধকারের মধ্যেও জ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায়, বিভিন্ন সচেতন মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের পায়ে ইনফেকশন, শিং ভাঙ্গা ক্ষতস্থান পূরণ, মুখে ইনফেকশন হওয়া র চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সারিয়ে তোলা মাঝেমাঝেই দেখে থাকি আমরা।
বিভিন্ন পশু পাখি, সারমেয়, ষাঁড় ছাড়াও অন্যান্য জীবজন্তুর সেবা করেন শুধুমাত্র মানসিক তৃপ্তির কারণে এমনও উদাহরণ নজিরবিহীন নয়!
আর যারা করেন না? তারা অজুহাত খোঁজেন, ব্যস্ততা, আর্থিক পরিস্থিতি, সময় নানা বিষয়। এমনই এক ঘটনা ধরা পরলো আমাদের ক্যামেরায়।
নদীয়ার শান্তিপুরের ভবানী পাড়ার তপন রক্ষিত, পেশায় ছোট কাপড়ের ব্যবসায়ী, কিন্তু আজ ১৫ বছর ধরে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা নিয়মিত, সকালে পাখি কে খাওয়ানো, গলিতে থাকা বিভিন্ন সারমেয়র ব্রেকফাস্ট করিয়ে, কালী, ভোলা ও মহাদেব নামের তিনটি আলাদা স্থানে থাকা ষাঁড় কে পুজোর বাতাসা, ভিজানো ছোলা, মরসুম অনুযায়ী কমদামের সবজি খাইয়ে, তারপর মন দেন ব্যবসার কাজে। আবার সারাদিন কাজকর্ম সারার পর রাতে বাড়ি ঢোকার সময় একইভাবে সেবা দেন শিবরুপী জীবের। আমরা সুশীল সমাজ, বাহবা দিই, অন্যের কাছে গল্প করি, ছবি তুলি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি, এমনকি তাকে নিয়ে খবরও করি! কিন্তু কাজে বেরোনোর সময়, আগের দিনের জমানো সবজির খোসা গুলো, বা খানিকটা বেঁচে যাওয়া ভাত রুটি মিনিট পাঁচেক সময় নষ্ট করে এদের আহারের ব্যবস্থা করলে ৪জি ৫জি গতি কি খুবই শ্লথ হয়ে যাবে? নাকি জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়বো? প্রশ্ন থাকলো আজ শিবরাত্রির অভিনন্দন এর সাথে।