মলয় দে নদীয়া:-পাঠাগার অনেক আছে। কিন্তু পাঠক? পাঠক প্রায় দুর্লভ! কিন্তু কেন?বেশিরভাগ পাঠাগারগুলোতে উৎকৃষ্ট মানের বই নেই। এমনই মতামত জানিয়ে থাকেন এক অংশের পাঠকরা।
উৎকৃষ্ট মানের বই বলতে যে বই মনের বিকাশ সাধনে সাহায্য করে, যে বই নতুন কিছু ভাবতে শেখায়, যে বই বিজ্ঞানমনস্ক মন তৈরি করে, যে বই প্রকৃত সত্য ইতিহাস তুলে ধরে, যে বই মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে তেমন বই পাঠাগারগুলোতে দুর্লভ। তারা জানাচ্ছেন, আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও দেখত পাই পাঠাগারগুলোতে ধর্মীয় গ্রন্থের ছড়াছড়ি যেগুলি কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, জাতি বৈরিতার দিক নির্দেশক। জাতপাত টিকিয়ে রাখার হাজারও কৌশলী গালগল্প দিয়ে ঠাঁসা ধর্মগ্রন্থগুলি। অথচ বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের উপযোগী বই নেই। যুক্তিবাদের বই কম। কিন্তু কেন? অসংখ্য পাঠাগার চিরকালের মতো বিদায় নিয়েছে। আর হাতেগোনা যেকটা আছে তারাও এখন দিন গুনছে কখন তাদের শেষ নিশ্বাসটুকু বেরিয়ে যায়!
এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ধর্ম নগরী নবদ্বীপে ১৫ ডিসেম্বর নবদ্বীপের “নাস্তিক ভিলায়” উদ্বোধন হলো “বিপ্লবী ভগৎ সিং পাঠাগার” যা সকল পাঠক পাঠিকার জন্য থাকবে উন্মুক্ত। পাঠাগার উদ্বোধন করে মৌসুমী প্রতাপের সাড়ে চার বছরের পদবীহীন সন্তান অনীশ সংকল্প। বিজ্ঞানমনস্ক পাঠক ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এবং সর্বসাধারণের মধ্যে পড়াশোনার ইচ্ছে জাগিয়ে তুলতে ‘নাস্তিক ভিলা’র পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ। ভগৎ সিংকে আমরা শুধু একজন আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবেই জানি। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর পরিচয় তিনি ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বিপ্লবী, আদর্শবাদী, দার্শনিক, বস্তুবাদী এবং নিরীশ্বরবাদী।
পাঠাগার কর্তৃপক্ষ মৌসুমী দেবনাথ বলেন, ভগৎ সিংয়ের আদর্শ, বস্তুবাদী চিন্তা, নিরীশ্বরবাদী চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে সরকারিভাবে। রাষ্ট্র বা সরকার ভাববাদের সাগরে দেশের জনগণকে ডুবিয়ে রাখতে চাইছে। এই ভাববাদ ও ঈশ্বরবাদকে সরিয়ে যুবসমাজের মধ্যে বস্তুবাদী চিন্তা, বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরী করার লক্ষ্যেই পাঠাগারের নাম “বিপ্লবী ভগৎ সিং পাঠাগার” রাখা হয়েছে। ভগত সিংয়ের বস্তুবাদী চিন্তা, আদর্শ, নিরীশ্বরবাদীতা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে আমরা বদ্বপরিকর থাকবো।”
নাস্তিক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, ” বিজ্ঞানমনস্ক পাঠক ও সংস্কৃতি গড়ে তুলতে নাস্তিক ভিলার উদ্যোগে এই পাঠাগার তৈরি করা হলো। নাস্তিক, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী শুভাকাঙ্ক্ষীরা এই পাঠাগারে বই পুস্তক দিয়ে পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”