সানাই এবং ঢাক ঢোল ঘন্টা কাসর বাজিয়ে ঘরের মেয়ে লক্ষ্মী র সাথে নারায়ণের বিবাহ,একদা বগুড়ার জমিদার বাড়ির লক্ষ্মী পুজো এবার ১৫৪ বছরে

Social

মলয় দে নদীয়া:-শব্দবিহীন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় নদীয়ার শান্তিপুরে চৌধুরী বাড়িতে রীতিমতন সানাই এবং ঢাকঢোল কাসর ঘন্টা ইত্যাদি বাজিয়ে পুজো করা হয় দেবী লক্ষীর। সানাইয়ের শব্দ এবং মন্ডপ সজ্জা থেকে শুরু করে আমন্ত্রিতদের পাত পেড়ে খাওয়া সব মিলিয়ে মনে হবে বিয়ে বাড়ি।

১৫৪ বছরে এ বছর পদার্পণ শান্তিপুরের চৌধুরী বাড়ি লক্ষীনারায়ণ পূজো। বর্তমান পুজোর দায়িত্বে থাকা প্রবীণ সদস্য রূপায়ন চৌধুরী জানান এই পুজোর সূচনা হয় পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশে। তবে তখন ছিল দুর্গাপুজো। সেখানেই পূর্বপুরুষরা করতেন, স্মৃতি থেকে জানতে পারেন দাদু মনমোহন চৌধুরী মহা সারম্বরে করতে নেই পুজো। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বগুড়ার জমিদার। এরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে দেশভাগের সময় মনমোহন চৌধুরী দিনহাটায় চলে আসেন সেখানকার কিছুটা মাটি নিয়ে। যা এখনো পর্যন্ত রাখা আছে শান্তিপুরের চৌধুরী বাড়িতে আর তা দিয়েই গড়া মন্দিরে নিত্য পূজো হয় । এরপর দিন হাটার এক গ্রামে এই পুজো উনি শুরু করেন। দিনহাটায় যখন পুজো শুরু হয় তার আগে পর্যন্ত দুর্গার পুজোই করা হত। এরপর দুর্গাপুজোর কোনও এক বিশেষ দিনে ওই বংশের কোন এক আত্মীয় দুর্ঘটনায় মারা যান পুজোর বাজার করতে গিয়ে। তখন পরিবারের সদস্যরা সেই বছর পুজো বন্ধ রেখে পরেরবার ওই কাঠামোতেই মা লক্ষ্মীকে উপাসনা করেন।

তবে সেক্ষেত্রে মাঝখানে থাকেন লক্ষ্মী, দুপাশে জয়া বিজয়া। এবং কার্তিক গণেশের জায়গায় থাকে লব ও কুশ। এরপর দিনহাটা থেকে এই পুজো চলে আসে নদীয়ার শান্তিপুরে আনুমানিক ৭০ সাল নাগাদ। পরিবারের সদস্য ঈশ্বর রমণীমোহন চৌধুরী এই পুজো শান্তিপুরে নিয়ে আসেন। যেহেতু আসল পূজিতা হন লক্ষী সেই কারণে কাঠামো থেকে লব কুশ এবং জয়া বিজয়ার প্রতিমা বাদ দেওয়া হল ব্রাহ্মণদের বিধান মেনেই। এবং তার পরিবর্তে করা হলো লক্ষীনারায়ণের প্রতিমা।

সাধারণত কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতে ঢাকঢোল কাশর ঘন্টার আওয়াজ করার প্রথা নেই। তবে এখানে লক্ষ্মীর বদলে পূর্বে যেহেতু দুর্গার আরাধনা করা হতো এবং এর পাশাপাশি পরিবারের লক্ষীকে নিজের মেয়ে মনে করা হয় এবং সেই কারণেই এই দিনে এই পূজার আয়োজন টা করা হয় একেবারে লক্ষ্মীনারায়ণের বিয়ের মতো করেই।
পুজোর আগের দিন করা হয় অধিবাস এবং পরের দিন বরণ ডালা থেকে শুরু করে তত্ত্ব সাজানো সমস্ত কিছুই করা হয় নিয়ম মেনে।

লক্ষ্মীপূজোর সমস্ত নিয়ম মেনে মন্ত্র পড়া হলেও এখানে লক্ষ্মীনারায়ণকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়। এবং আটদিন বাদে পুনরায় হয় অষ্টমঙ্গলা। এবং পুনরায় আরও একবার পুজো করা হয়। এবারেও বৃহস্পতিবার বিসর্জনের পরে ঘটে করে গঙ্গার জল নিয়ে এসে সেটি পাটে তুলে রাখা হয়। এরপর সাতদিন বাদে অষ্টমঙ্গলার পূজো করা হয় এবং এক বছরের মত মায়ের পূজার্চনা সমাপ্ত করা হয়।

Leave a Reply