মলয় দে নদীয়া :-এ যেন এক জীবন্ত বিশ্বকর্মা। অনেকদিন আগেই হারিয়েছেন মূল্যবান দুটি চোখ, কিন্তু তারপরেও আর পাঁচটি সাধারণ মেকানিকের মতই শুনিপুন দক্ষতার সঙ্গে সাইকেলের যাবতীয় সবকিছুই সারাই করে আসছেন শান্তিপুরের এই সাইকেল মেকানিক কৃষ্ণ ধন সরকার। বিশ্বকর্মা পুজো সদ্য সমাপ্ত হয়েছে এখনো হয়নি মূর্তি বিসর্জন। তবে তারই আগে এক জীবন্ত বিশ্বকর্মার সন্ধান পাওয়া গেল নদীয়ার শান্তিপুর বাথানগাছি বাজার সংলগ্ন মধ্যপাড়ায়। ১০০% দৃষ্টিহীনতার প্রতিবন্ধকতা নিয়েই নিয়মিত প্রায় দীর্ঘ 12 বছর ধরে সাইকেল সারানোর মতো সূক্ষ্ম বিষয়ে মেকানিক হিসেবে স্বনামধন্য তিনি। সময় কিঞ্চিৎ বেশি লাগলেও আজও ভালো কাজের জন্য তার দোকানে প্রতীক্ষায় থাকেন ভ্যান কিংবা রিক্সা অথবা সাইকেল চালকরা । চারিদিকে টোটোর বার পর্যন্ত হলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো এ ধরনের যানবাহন নেহাত খুব কম নয়!
গতকাল বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আর পাঁচটি দোকানের মত তার দোকানেও হয়েছে পুজো তবে বন্ধ হয়নি তিনি কাজ করেছেন প্রায় ২০০ টাকা র। তার কারণ এই দোকানের উপর নির্ভর করেই সংসার চলে তার। পরিবারের রয়েছেন ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন এক স্ত্রী টোটো চালানো একমাত্র পুত্র এবং পুত্রবধূ ও নাতি । উপার্জন বলতে তিনি এবং তার ছেলে, সামান্য যা কিছু উপার্জন করেন তাই দিয়ে কোন রকমে চলে সংসার। তবে বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার জন্য পরিবারে মানবিক ভাতা এক হাজার টাকা করে পান দুজনে।
সেই কারণেই দৃষ্টিহীনতার প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আজও পেটের দায় এবং অভ্যাসের বসেই দক্ষতার সঙ্গে সাইকেল সারিয়ে যাচ্ছেন তিনি সকলের।
দুই চাকার উপর লোহার ফ্রেম বসানো সাইকেলে থাকে নানান সূক্ষ্ম কল কব্জা। সাইকেলের একাধিক সমস্যা যা কিনা অনেক অভিজ্ঞ মিস্ত্রিরাও সারাই করতে পারেন না। তবে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি তার আঙ্গুলের স্পর্শেই এবং কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করেই সাড়াই করে চলেছেন একের পর এক সাইকেল। অন্যান্য মেকানিক্যাল থেকে একটু সময় বেশি লাগলো সাইকেল আরোহীরা তার কাছেই আসতে পছন্দ করেন, কারণ তারা জানাচ্ছেন তিনি কাজ করেন অত্যন্ত ধীরে সুস্থে। যার ফলে সাইকেলের সমস্যার সমাধান হয় চিরস্থায়ী।
সাইকেলের বল বিয়ারিং, চাকার টাল ভাঙ্গা, এছাড়াও সাইকেলের চাকার পাংচার সারানো ইত্যাদি সূক্ষ্ম এবং দক্ষ কাজ সুনিপুণভাবেই দৃষ্টি না থাকা সত্ত্বেও তিনি করে থাকেন অনায়াসেই। আর সেই কারণেই অনেকেই তাকে বলে থাকেন স্বয়ং বিশ্বকর্মার অবতার।
একমাত্র পুত্র, সৌমিত্র বলে দোকান ঘর খোলা বন্ধ থেকে শুরু করে বাবার আলমারিতে বিভিন্ন ছোট ছোট সাইকেলের পার্টস পত্র সবকিছু তার নখোদর্পনে অনেক সময় আমরা তা খুজে পাইনা কিন্তু তিনি অনাসেই খুঁজে পান।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য মানস ঘোষ জানাচ্ছেন উনার আগে দোকান ছিল বর্তমানে জাতীয় সড়কের পাশে তবে সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে সে দোকান ভাঙ্গা পড়ে তাই বাড়িতেই দোকান দিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে একই বাড়িতে স্বামী স্ত্রী দুজন বিশেষভাবে সক্ষমকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং একটি আইসিডিএস এর কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।