মলয় দে নদীয়া:-পড়াশোনার পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অংশ হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে শান্তিপুর চক্রের কানাই বঙ্গ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সূত্রাগড় এম এন উচ্চ বিদ্যালয় । তবে এর আগেও শান্তিপুর মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয় তন্তুবায় উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নাট্য চর্চাদেখা গেছে ।
তবে জেলার বাইরে কোলকাতার উপকন্ঠে বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীদের নাটকে অংশগ্রহণ হয়তো এই প্রথম।
অনীক আয়োজিত বিংশ বর্ষ সারা রাজ্য ব্যাপী আন্তঃ বিদ্যালয় বাংলা ছোট নাটক প্রতিযোগিতার পাঁচটি পর্যায়ের প্রথম পর্যায়ে বেলঘরিয়ার উদয়পুর হরদয়াল নাগ আদর্শ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আগামী ১৩ই এবং ১৪ই জুলাই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সেখানে শান্তিপুর চক্রের কানাই বঙ্গ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীরা তাদের অভিনীত , উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কাহিনী অবলম্বনে ও নীলিমা বিশ্বাস, শান্তিপুর রঙ্গপীঠ নির্দেশিত নাটক “দুষ্টুর শাস্তি” উপস্থাপন করবে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পনেরো জন্য ছাত্র -ছাত্রী এই নাটকে অংশগ্রহণ করবে।
অন্যদিকে শান্তিপুর এমএন উচ্চ বিদ্যালয় এর শিক্ষক অভিনেতা এবং নাট্যনির্দেশক কৌশিক চ্যাটার্জির তত্ত্বাবধানে প্রায় একমাস ধরে অনুশীলন করে ১৭ জন ছাত্র পাঠশালা নামে একটি থিয়েটার মঞ্চস্থ করতে চলেছেন।
এ প্রসঙ্গে কৌশিক বাবু জানান, থিয়েটার মানে শুধু বিনোদন নয় , শিশুর শরীর মন বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র । ভবিষ্যতে জীবনে নানা প্রতিকূলতার সমাধান করতে এবং সর্বোপরি নিজে নিজের কাজ করে নেওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় থিয়েটার থেকে। এছাড়াও গান নাচ আবৃতি হাস্যকৌতুক সহ বিভিন্ন কন্ঠে কথা বলা ছোট থেকেই সমাজের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি গুলি অবগত হওয়া এ সব শিক্ষাই পাওয়া যায় এখান থেকে যা আগামীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে তিনি তার সূত্রাগর এম এন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাপেট থিয়েটাের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা শেখানোর চেষ্টা করেন। তবে সব বিদ্যালয়ে থিয়েটারের সাথে যুক্ত শিক্ষক থাকেনা তাই তার মতে এ বিষয়ে সরকারের একটা সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। তবে থিয়েটারে শান্তিপুর বহু প্রাচীনকাল থেকে সুনাম অর্জন করে আসছে। গত ২০১০ সাল থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রয়াত অজয়দের ইচ্ছাতে পুরসভার ব্যবস্থাপনায় সাত বছর ধরে লাগাতার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সারা বছর ধরে চলতো থিয়েটার উৎসব তবে বর্তমানের তা আর দেখতে পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে কানাই বঙ্গ স্মৃতির প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক প্রতিম সেন জানান, তারা এই প্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শান্তিপুরের বাইরে প্রদর্শন করতে যাচ্ছেন । মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে নাট্যচর্চা দেখে গেলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুব কম লক্ষ্য করা যায়। তবে শান্তিপুর রঙ্গপীঠের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অদম্য ইচ্ছা ছাড়া এই নাটক উপস্থাপন করা বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিলো। তবে সর্বোপরি অভিভাবকদের সম্পূর্ণ সহযোগিতায় এবং তাদের অনুমতিক্রমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিলো।
এ বিষয়ে রঙ্গ পিঠের সদস্যা নীলিমা বিশ্বাস জানান, অনীক কলকাতার একটি প্রখ্যাত নাট্য দল। দীর্ঘদিন ধরে তারা থিয়েটার নিয়ে নানারকম কাজ করে চলেছেন। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হল স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে থিয়েটারের যোগ সাধন ঘটানো। বিভিন্ন স্কুলগুলোকে তাদের পড়ুয়াদের নিয়ে থিয়েটার করাতে উৎসাহিত করা। যাতে আগামী দিনে বাচ্চারা থিয়েটার নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে। তবে সরকারি উদ্যোগ না থাকলেও তাদের সংগঠন রঙ্গপীঠ শান্তিপুর শহর এবং ব্লকের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকতার সঙ্গে নিয়মিত বিদ্যালয়ে থিয়েটার শেখানো এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে থাকেন। এবং এর ফলে থিয়েটার এখনো গতি হারায়নি। তিনি মনে করেন শিশুরা একসাথে কিছু করলে তাদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশিত হয়। পড়াশোনা করার পাশাপাশি শরীর এবং মন সুস্থ থাকে সহমর্মিতা জন্মানোর সাথে আত্মনির্ভর হওয়া এবং ধৈর্য বৃদ্ধি হয়ে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা যায়।
অন্যদিকে চূড়ান্ত অনুশীলনে খুদে অভিনেতারাও খুশি কলকাতায় যাওয়ার আনন্দে।