১৮ বছরের অশ্বত্থের সাথে ১২ বছরের বটের বিয়ে!  ছাদনাতলা, সিঁদুর দান, মালাবদল অগ্নিসাক্ষী বরযাত্রী কন্যা যাত্রীর সবেতেই চমক!

Social

মলয় দে নদীয়া:-ছাদনা তলা থেকে শুরু করে বরপক্ষ কনেপক্ষ নিয়ে বিয়ের আসর জমজমাট! পাত পেরে খাওয়ানো হলো আমন্ত্রিত অতিথিদের। তবে এই বিয়ে কিন্তু কোন মানব পুরুষ কিংবা নারীর বিয়ে নয়। এই বিয়ে দুটি গাছের। নদীয়ার শান্তিপুরে বট ও অশ্বত্থ গাছের বিয়ে দেওয়া হল মহাসমারহে। তবে গাছেদের বিয়ে বলে কিন্তু দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করা হয়নি এই বিয়ে। ছিল বরপক্ষ কনে পক্ষ। উপস্থিত ছিলেন পুরোহিত ক্ষৌরকার প্রত্যেকেই।

দধিমঙ্গল থেকে শুরু করে আশীর্বাদ, গায়ে হলুদ, যজ্ঞ, মালাবদল এমনকি সিদুর দান! প্রতিটি প্রথাই মানা হয়েছে নিয়ম করে। এখানে বটগাছ হল কনে। আর অসত্থ গাছ হল বর! বিষ্ণু পুরাণ মতে অশ্বত্থ গাছকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে মানা হয়ে থাকে এবং বটগাছকে লক্ষ্মী দেবী হিসেবে মানা হয়। শান্তিপুরের এই অশ্বত্থ গাছের বয়স ১৮ বছরের কাছাকাছি এবং বটগাছের ১২ বছর। প্রায় পাশাপাশিই রয়েছে এই দুটি গাছ। আজ সাড়ম্বরের সঙ্গে গান্ধর্বমতে সমস্ত নিয়ম মেনেই দেওয়া হল বট ও অশ্বত্থ গাছের বিয়ে।

পুরোহিত বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য জানান, সম্পূর্ণ রীতি নিয়ম মেনে যেভাবে বিবাহ হয় সেভাবেই এই বিবাহ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এখানে একটু কাজ বেশি রয়েছে আমাদের। যেমন গাছেদের স্নান করানো তাদের বিভিন্ন সময়ে যে মন্ত্রগুলো রয়েছে আমাদের সেই রীতি অনুযায়ী যেই দৈবিক রীতিগুলো রয়েছে সেই নীতি অনুযায়ী আমাদের কাজগুলি করতে হয়। এবং গান্ধর্ব মতে যেভাবে বিবাহ দেওয়া হয় এখানেও ঠিক একইভাবে বট ও অশ্বত্থ গাছের বিবাহ দেওয়া হয়েছে।”

কণেপক্ষ অর্থাৎ বট গাছের মা হয়েছিলেন স্থানীয় এলাকারই এক বাসিন্দা লক্ষ্মী দাস। তিনি আমাদেরকে জানান, “এখানকার লোকেরাই আমাকে বলেছিলেন আমাকে বটগাছের মা হতে হবে। আমি তাই রাজি হয়েছি। ওরা তো গাছ হলেও ঠাকুর তো! তাদের ক্ষেত্রে মা-বাবা হওয়াটা নিজেদের ভাগ্যের ব্যাপার সেই কারণেই আমি সম্মতি জানিয়েছি।”

বরপক্ষের অর্থাৎ অস্বথ্থ গাছের মা হয়েছিলেন তিনি জানান “সমস্ত কিছুই নিয়ম মেনে পালন করতে হয় এই বিবাহের ক্ষেত্রে। আমরা দধিমঙ্গল দিয়ে গায়ে হলুদের পর্ব শেষ করে আশীর্বাদ নিয়ে জলতোলা থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়ম পালন করেই এই বিবাহ দিয়েছি। এতে আমরা খুব খুশি।”

উল্লেখ্য দিনের পর দিন চওড়া রাস্তা উড়ালপুল ইমারত তৈরি করার জন্য লক্ষ লক্ষ গাছ কাটা হচ্ছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরা প্রত্যেকেই সাধারণ মানুষকে জাগরিত করার জন্য একের পর এক প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন। তবুও থামানো যাচ্ছে না বৃক্ষ ছেদন। সাধারণ মানুষ একদিকে নির্বিচারে বৃক্ষ ছেদন করছেন নিজেদের স্বার্থকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আবার অপরদিকে তাদেরই একাংশ বৃক্ষকে দেবতা মনে করে তাদের বিবাহের রীতি নিয়ম পালন করছেন।
অন্যদিকে সকলে সেজেগুজে বিয়ে বাড়িতে এসে সেলফি তোলা তাসা ব্যঞ্জন এর সাথে নাচ , দীর্ঘক্ষণের বিবাহ দেখা অবশেষে বসে পাতপেড়ে খাওয়া এসবই হয় সন্ধ্যের পর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন ১৮ বছর আগে একসাথে বট ও অশ্বত্থ লাগানো হলেও বটগাছ ছাগলে মুড়ে খেয়ে যাওয়ার কারণে আকার আকৃতি অনুযায়ী তার বয়স ১২ আর এই 12 বছর বাদেই বিবাহযোগ্যা হয়ে উঠে সে। একই সাথে গায়ে গা লাগিয়ে বেড়ে ওঠা দুই গাছের শুভ পরিণয় সম্পন্ন না হলে নাকি অমঙ্গল হয় এলাকায় অন্যদিকে চার হাত থুড়ি শয়ে শয়ে ডাল ডাল এবং হাজার হাজার পাতা একত্রিত করলে শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে এলাকা মানুষ ধনলক্ষ্মী পূর্ণ হয় লক্ষীনারায়ণের কৃপায়। এ সমস্ত সনাতন ধর্মের পৌরাণিক পরিবেশ এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত নিদান অতি প্রাচীনকাল থেকেই।

তবে এই বট ও অশ্বত্থ এর বিবাহ কি খানিকটা হলেও গাছেদের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলে বৃক্ষ ছেদনের বিরুদ্ধে সচেতন করতে পারবে সাধারণ মানুষকে, তা সকলেরই অজানা।

Leave a Reply