জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ৭৭ তম হত্যা দিবস স্মরণে সিপিআইএম শান্তিপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে পথসভা, কটাক্ষ তৃণমূলের এবং বিজেপির! জাতীয় কংগ্রেসের মতে বিলম্ব বোধদয়

Social

মলয় দে নদীয়া :-৩০শে জানুয়ারী ভারত শহীদ দিবস পালন করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। দিনটিকে জাতির ‘বাপু’, মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। ১৯৪৮ সালের এই দিনে গান্ধী তার নিয়মিত সভাগুলির একটির পরে বিড়লা হাউসের প্রাঙ্গণে নাথুরাম গডসে তাঁকে হত্যা করেছিলেন। হিন্দু মহাসভার সদস্য গডসে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ নেওয়ার জন্য গান্ধীকে দোষারোপ করেছিলেন।

শহীদ দিবসের তাৎপর্য এই সত্যে নিহিত যে মহাত্মা গান্ধী, যিনি ‘জাতির জনক’ হিসাবে পরিচিত, তিনি অহিংস পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুবার্ষিকীকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং তার দর্শন ছিল অহিংসা, সত্যের জন্য লড়াই (সত্যাগ্রহ), এবং রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার (স্বরাজ) নীতির উপর ভিত্তি করে।

প্রতি বছর, ৩০শে  জানুয়ারী, ভারত দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদ দিবস উদযাপন করে। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং তিন বাহিনীর প্রধান (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ৭৭ তম হত্যা দিবস স্মরণে সিপিআইএম হয়েছে বেশ তৎপর। তৃণমূল কিংবা জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো অনুষ্ঠান না দেখা গেলেও শান্তিপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে পথসভা । আর তাই নিয়েই কটাক্ষ তৃণমূল ও বিজেপির। জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে বিলম্বে বোধোদয়ের শুভেচ্ছা।
এদিন নদীয়ার শান্তিপুরে সিপিআইএম শান্তিপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যা দিবস স্মরণে পথসভার আয়োজনে মুখ খুলল তৃণমূল বিজেপি ও জাতীয় কংগ্রেস।

ভারতীয় জনতা পার্টি নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিকের জেলার সম্পাদক সোমনাথ কর জানান, “যে সিপিএম লাল পতাকা ছাড়া অন্য কোন পতাকা মানতো না সেই কারণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করত না, যেই সিপিএম নেতাজি কিংবা বিবেকানন্দকে মানতো না শুধুমাত্র কিছু ভোট পাওয়ার আশায় এখন অনেক কিছুই তাদের করতে হচ্ছে। তবে আমরা কখনোই জাতির জনক কে হত্যা সমর্থন করি না, বরং তার চিন্তাধারা মতাদর্শ এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ভাবে মেনে চলছে। নাথুরাম গডসের আরএসএস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গান্ধীজীর সর্বকনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন এ কাজ করেছেন সে বিষয়ে বর্ণিত কথা বই আজও অনেকের আগ্রহের বিষয়।

প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য আইএনটিইউসি নদীয়া জেলার সভাপতি অলোক চ্যাটার্জি জানান, ” আমরা জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই দিনটি স্মরণ করি এবং তাঁর মতাদর্শ চিন্তাভাবনা মেনে চলার চেষ্টা করি। এটি একটি গভীর শোকের দিন যেদিন মহাত্মা গান্ধীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল যাকে জাতির জনক বলা হয়। সেই কারণে সমস্ত কংগ্রেসিদের কাছে এটি শোকের দিন। সিপিএম করছে তাদের হয়তো চেতনার বিকাশ ঘটেছে।” এছাড়াও তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, “মা সারদা যেমন বলেছিলেন আমি সতেরও মা ‘অসতেরও’ মা, ঠিক তেমনি গান্ধীজিকে ও জাতির জনক বলা হয়ে থাকে যদি সিপিএম আজকের দিনটা পালন করে থাকে তাহলে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ”।
তৃণমূলের পক্ষ থেকেও, বিলম্বিত বোধোদয় বলে মনে করছেন শান্তিপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নরেশ লাল সরকার। তিনি বলেন, একসময় গান্ধীজী নেতাজি সহ আমরা যাদের দেখানো পথ অনুযায়ী রাজনীতি করতাম তখন এই বামপন্থীরাই চীন জাপান রাশিয়ার দৃষ্টান্ত সামনে এনে মহামানবদের অনেক অপমান সূচক কথা বলতো আজ তাদের এই গান্ধী প্রেম বিলম্বিত বোধদয়।

যদিও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেন সিপিআইএম শান্তিপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সঞ্জিত ঘোষ, তিনি বলেন,”গান্ধীজী বর্তমান সময়ে এই কারণেই প্রাসঙ্গিক তার প্রধান কারণ ধর্মের নামে একবার এই দেশকে ভাগ করা হয়েছিল স্বাধীনতার সময়ে, সেরকম দিকেই বিজেপি এবং আরএসএস সেই দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তবে দেশের বিষয়ে কিংবা গান্ধীজিকে হত্যার প্রতিবাদে সে সময় জ্যোতি বসু সরব হয়েছিলেন, সে কথা হয়তো আজকের সমালোচকদের অজানা ।
আরএসএসের অন্যতম সদস্য নাথুরাম গডসে গান্ধীজীকে হত্যা করে, গান্ধীজিকে হত্যা করা মানে দেশের আত্মাকে হত্যা করা। আমরা বলছি না যে আমরা গান্ধীবাদী তবে আমাদের মধ্যে কিছু মতাদর্শ ঐক্যের মিল রয়েছে গান্ধীজীর সঙ্গে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই মহাত্মা গান্ধী গোটা ভারত বর্ষকে বেঁধেছিলেন এবং এই অহিংসার পথকে বেছে নিয়েছিলেন সেই কারণেই আজকে আমাদের এই উদ্যোগ” ।

তবে সিপিআইএমের এই গান্ধী প্রেম আদতেও আগামী আসন্ন লোকসভা ভোটের ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা তা সময়ই বলবে।

Leave a Reply