হাতে আঁকা শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে নদিয়া থেকে আমেরিকায়

Social

মলয় দে নদীয়া:-নেট দুনিয়ায় ভর করে গ্রিলের কারখানার কর্মচারীর মেয়ের নিজের হাতে আঁকা শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে আমেরিকায়। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে জেরে প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিভাবান ব্যক্তিও উঠে আসেন সংবাদ শিরোনামে। ভাইরাল হওয়ার পরে খুলে যায় তাদের ভাগ্য। তবে এক্ষেত্রে অন্য রানাঘাট কুপার্স কুমার শটপুর মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা পৌলমী দাস ছোটবেলা থেকেই আঁকার প্রতি ভালোবাসা জন্মে গিয়েছিল তার। আঁকার প্রতি তার ভালোবাসা এবং আগ্রহ দেখে তার বাবা ভর্তি করিয়ে দেন অংকন প্রশিক্ষণের জন্য রানাঘাটে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী সঞ্জু কুন্ডুর কাছে। সেই থেকেই তার পথ চলা শুরু।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি একের পর এক অসাধারণ ছবি আঁকতে শুরু করে সে। শুধু খাতাতেই নয় সে ছবি আঁকতো মাটির বিভিন্ন সামগ্রীতে এবং বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্রের উপরেও। সেই সমস্ত ছবিগুলি সে তার নিজের সোশ্যাল মাধ্যমে দেওয়ার পর থেকেই অফুরন্ত ভালোবাসা পায় সে। তার হাতে আঁকা বেশকিছু সৌখিন জিনিসপত্র ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করে সে। তবে এই অনলাইন কেনাবেচা মূলত করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শুরু হয় বলে জানিয়েছে সে । তবে এবার আমেরিকা প্রবাসী সুমন রায় এবং তার স্ত্রী লিপিকা মজুমদার রায় পৌলমী দাসের আঁকা ছবি সোশ্যাল মাধ্যমে দেখে যোগাযোগ করেন তার সঙ্গে। তারা বরাত দেন শাড়ির ওপরে তার হাতে আঁকা চিত্রের। কথাবার্তা পরে জানা যায় ওই আমেরিকা প্রবাসী দম্পতির বাড়ি রানাঘাটের স্থানীয় এলাকাতেই। আলাপচারিতার পরে কাপড়ের জন্য অগ্রিম টাকা নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি বলে জানায় পৌলমী।

শাড়ির উপরে ফুটিয়ে তুলেছে সে ফ্লোরাল আর্ট! রয়েছে ফ্লোরাল আর্টের একাধিক নিদর্শন। যা দেখে অভিভূত হয়ে যাবেন যে কেউ। অত্যাধুনিক মানের এই রং শাড়ি থেকে উঠে যাবে না কখনোই বলে দাবি পৌলমীর। শাড়িটি তৈরি করে আমেরিকায় পাঠাতে সম্পূর্ণ খরচ পারিশ্রমিক সহ আনুমানিক ১০ হাজার টাকার মতো ধার্য করেছে সে। ইতিমধ্যেই শাড়িটির অর্ডার দেওয়া সেই দম্পতি একাধিকবার ভিডিও কলের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানায় সে। বাবা প্রশান্ত দাস একজন সাধারন গ্রিল কারখানার কর্মচারী। তিনি চান তার মেয়ে ছবি আকার মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হোক এবং নিজের পায়ে দাঁড়াক। আপাতত মেয়ের হাতে আঁকা শাড়ি আমেরিকায় পাড়ি দেওয়াতে খুশি তাদের গোটা পরিবার।

অন্যদিকে চাকদহ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের ছাত্রী পৌলমী জানিয়েছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যা চাকরি-বাকরির পরিস্থিতি তাতে আগেভাগেই একটা আয়ের রাস্তা দেখে রাখা উচিত, আর তা অবশ্যই নিজ নিজ পছন্দের। এ ব্যাপারে প্রথম অনুপ্রাণিত হয়েছিলো আঁকার স্যার সঞ্জু কুন্ডুকে দেখে কারণ তার তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম নেট দুনিয়ায় বিক্রি হতো, সেই শিক্ষকও এই শাড়ি আঁকার ক্ষেত্রে অনেক ভুল ভ্রান্তি শুধরে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে হলুদ সাদা বেগুনি রানী সবুজ নানান ধরনের ফেব্রিক রং ব্যবহার করা হয়েছে যা পিওর মুর্শিদাবাদ সিল্কের উপর অত্যন্ত উজ্জল অথচ ক্ষণস্থায়ী নয়। শাড়ির মধ্যে ফ্লোরাল কুইন, গোলাপ প্রজাপতি এ ধরনের নানা বিষয় রংয়ের ছটায় আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তবে এভাবে আরো কিছু অর্ডার পেলে পৌলমি তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি বাণিজ্যিক ওয়ার্কশপ খুলবে বলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

Leave a Reply