কর্নিয়া প্রদানে সৃষ্টি হলো ইতিহাস ! সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে মাত্র ১৪ বছর বয়সী সুজয়ের চোখ দিয়ে দেখবে দুজন দৃষ্টিহীন মানুষ

Social

মলয় দে নদীয়া:-যে সময়ে তার মাঠে খেলা করার কথা, যে সময়ে পিঠে ব্যাগ নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই সময়ে অন্যের কাঁধে চেপে অন্তিম যাত্রা সুজয়ের।

আজ ১৮ই ডিসেম্বর নদীয়ার শান্তিপুর ৩নং রেলগেট এলাকার রাইটার পাড়ার বাসিন্দা মাত্র ১৪বছর বয়সী সুজয় কর্মকার মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। স্থানীয় বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি সনাতন প্রামাণিকের যোগাযোগে ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর যতন সরকার ও বর্তমান কাউন্সিলর প্রভাত বিশ্বাসের প্রচেষ্টায় শান্তিপুর মরমী তার পরিবারের স্বইচ্ছায় একজোড়া কর্নিয়া সংগ্রহ করে।

কর্নিয়া সংগ্রহের সংগঠন মরমীর শাখা হিসাবে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে আসা অজয়দে আই কালেকশন সেন্টারের টেকনিশিয়ান রঘুনাথ কর্মকার
অত্যন্ত বেদনাদায়ক এই ঘটনায় তারা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এটা তাদের ১৩৮ তম সংগ্রহ, তবে এর আগে এত ছোট বয়সি কারোর মৃত্যুতে কর্নিয়া সংগৃহীত হয়নি। সুজয় এ পৃথিবীতে থাকলো না ঠিকই তবে তার মৃত্যুর পরেও এ দুটি কর্নিয়া দিয়ে দুজন দৃষ্টিহীন মানুষ দেখবে পৃথিবীর আলো। সুজয়ের বাবা সুফল কর্মকার সহ সমস্ত আত্মীয় পরিজন এবং এলাকাবাসী সম্মতি প্রকাশ করে অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

মৃতের পিতা সুফল কর্মকার পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন অত্যন্ত অভাবী পরিবারের সন্তান বিয়োগে যে সময়ে কান্নায় লুটিয়ে পড়ার কথা সেই সময়ে চোখের জল কোনো রকমে সামলে নিয়ে জানালেন আমার ছেলেকে তো ধরে রাখতে পারলাম না, ছেলের দ্বারা অন্য কেউ পৃথিবীর রূপ দেখুক এতেই আমাদের অনাবিল আনন্দ। তাই মরণোত্তর চক্ষু দান করার প্রস্তাব পেয়ে তা আমরা সাদরে গ্রহণ করলাম।

প্রতিবেশীরা জানান সুজয়ের বাবা-মায়ের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা তাদের নেই তবে সন্তানের অকাল মৃত্যুতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে সাহসিকতার পরিচয় দিলেন, তা মোটেই সহজ কাজ নয়। দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখালেন, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকলো। কেউ কেউ বললেন তাদের ধারণা ছিলো সম্পূর্ণ চোখ নিয়ে নেবার পর মৃতদেহ অস্বাভাবিক দেখতে হয়ে যায়। কিন্তু আজ প্রকাশ্যে এভাবে কর্নিয়া সংগ্রহ দেখে আরো সাহস পাওয়া গেগেলো আগামী দিনে অনেকেই আগ্রহী হবে এ বিষয়ে।

কর্নিয়া সংগ্রহকারী সংগঠনকে প্রথম খবর দেওয়া বিশেষভাবে সক্ষম সনাতন প্রামানিক জানান, তাদের সংগঠনে অনেকেই কর্নিয়া সংক্রান্ত সমস্যায় দৃষ্টিহীন, ইদানিং মরমী সংগঠনের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকজন দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন তাই, মৃত্যুর খবর পেলে তা দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ কর্নিয়া কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি, শুধুমাত্র মৃত্যুর পর আগুনে দাহ করে কিংবা কবরে দিয়ে নষ্ট না করে একজন মানুষকে বাঁচানো অনেক বড় পুণ্যের কাজ।

এলাকার গৃহবধূ চাঁদ কুমারী প্রামানিক জানান, পরের জন্মে দৃষ্টিহীন হয়ে জন্মানোর একটা ভুল ধারণা রয়েছে অনেকের মধ্যেই বরং সারা জীবনে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতায় ব্যস্ত থাকার কারণে অন্যের জন্য কিছু করা সম্ভব হয় না এভাবে মৃত্যুর পর কর্নিয়া প্রদানের মধ্য দিয়ে দুজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা যায় খুশিতে।

Leave a Reply