মলয় দে নদীয়া:-সংগঠনের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে শনিবার সকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস পালন নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে । ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিজয় দিবস পালন। ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন কাদিপুর বিএসএফের ক্যাম্পের ওসি বলবান সিং।
এতদিন লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা ৭ জন শহীদ ভারতীয় সৈনিকের সমাধিতে মাল্যদান করে শহীদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন নদীয়ার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার প্রাক্তন সেনাকর্মী ও এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। প্রাক্তন সেনাকর্মী ও কর্মজীবন থেকে অবসর প্রাপ্তদের নিয়ে এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশন। এই এক্স সার্ভিস ম্যান এসোসিয়েশনের পথচলা শুরু হয় ২০২২ সালের ২৪শে এপ্রিল।
এই প্রসঙ্গে এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী শিশির কুমার মিত্র জানান, আজ সংগঠনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের সূচনা পড়বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কাদিপুর বিএসএফ ক্যাম্পের ওসি বলবান সিং ।এর সাথে ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে শহীদ ৭ জন ভারতীয় জওয়ানের সমাধিতে মাল্যদান করে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়। এতদিন এই সমাধিস্থলটি লোক চক্ষুর আড়ালে থাকায় জঙ্গলের স্তুপে পরিণত হয়েছিল। আমরা কোনরকম শ্রমিকদের সাহায্য ছাড়া নিজেরাই জায়গাটিকে পরিষ্কার করে সাজিয়ে তুলি এবং আজ শহীদদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়।
সংগঠনের অন্যতম সদস্য ভজন কুমার বিশ্বাস বলেন ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বলবন্ত সিং, ভৈরব দত্ত, মোহন সিংহ, মূর্তি সিংহ, মহেশ্বর সিংহ, দুর্গা সিংহ ও তেগ বাহাদুর নামের এই ৭ জন ভারতীয় সেনা কর্মী শহীদ হয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন তাদের এই স্থানে কবরস্থ করেন তৎকালীন ভারতীয় সেনা আধিকারিকেরা। এরপর কালের নিয়মে ৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত এই খানে শায়িত শহীদদের প্রতি কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়নি। যার ফলে শহীদ সেনা জওয়ানদের সমাধি স্থানটি চলে গিয়েছে লোক চক্ষুর আড়ালে। স্থানীয় মানুষজন এই সমাধির কথা জানলেও সেই অর্থে গুরুত্ব সহকারে কেউ এতদিন সমাধি স্থানটিকে সংরক্ষণ করার বিষয় ভাবেননি। মানুষজনের যাতায়াত না থাকার কারণে কার্যত অনাদরে কৃষ্ণগঞ্জের খাল বোয়ালিয়া এলাকায় মল্লিকদের বাগানে শহীদদের এই সমাধি স্থানটি বর্তমানে জলা জঙ্গলে আবৃত হয়ে পড়েছে। এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের উদ্যোগে শহীদ জওয়ানদের সমাধি স্থানটিতে ভোরে থাকা জলা জঙ্গল কেটে জায়গাটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলেন।
সংগঠনের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে এইদিন সকালে এই স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে শহীদ ভারতীয় জনদের মাল্যদান করে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামী দিনেও আর্মি ডে থেকে শুরু করে স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবসের মত বিভিন্ন বিশেষ দিনে এখানে উপস্থিত হয়ে শায়িত ৭ জন ভারতীয় শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হবে। এক্স সার্ভিস ম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ছাড়াও এদিনের শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিক মধুসূদন বাবু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন আমাদের খুব ভাবতে লজ্জা লাগে এবং অবাক হতে হয় এই ভেবে যদি কোন রাজনৈতিক দলের কোন কর্মী মারা যান তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ দিবস পালন করা হয় ঘটা করে । অথচ দেশের জন্য যারা প্রাণ বলিদান করেন তাদের কোন রাজনৈতিক দলই মনে রাখেনা। অথচ এইসব সেনা কর্মীদের জন্যেই তারা নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারেন ঘুমোতে পারেন । এটা আমাদের পক্ষে খুবই লজ্জাজনক ঘটনা । তিনি আরো খবের সঙ্গে বলেন স্থানীয় ভিডিও থানার আইসিকে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও তিনারা এই অনুষ্ঠানে আসেন নি ।এক্স সার্ভিস ম্যানরা নিজেরাই শহীদ স্মরণ সভা করবে প্রতিবছর পাশাপাশি তিনি একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করেন । মধুসূদন বাবুর বক্তব্যে করতালিতে ভরে যায় বিজয় দিবস প্রাঙ্গণ ।