দেবু সিংহ,মালদা:-সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে তুলেছেন মালদার হবিবপুর ব্লকের শেফালী বেওয়ার কালীপুজো। ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা শেফালী বেওয়া বর্তমানে বয়সের ভারে পুজোর জোগার যন্ত্র তেমনভাবে করতে পারেন না। তাই পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়ে আজও সাড়ম্বরে হবিবপুর ব্লকের মধ্যমকেন্দুয়া গ্রামে মশান কালীর পুজো ধুমধাম করে হয়ে আসছে। যা মালদাবাসীর কাছে শেফালী বেওয়ার কালী পুজো নামেই পরিচিত। গ্রামবাসীদের কথায়, এই মশান কালীর মায়ের মাহাত্ম্য অপরিসীম। পুজোর সময় প্রাণ ভরে বেদীতে মাথা ঠুকলে সহজেই গায়েব হয়ে যায় নাকি দুরারোগ্য ব্যাধি। যেমনটা ৪০ বছর আগে এই মধ্যমকেন্দুয়া গ্রামের বাসিন্দা শেফালী বেওয়ার হয়েছিল। স্বপ্নাদেশে মায়ের আদেশ পেয়েই পুজো শুরু করেছিলেন শেফালী বেওয়া। কিন্তু অন্য সম্প্রদায়ের মহিলা হওয়াই প্রথমে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু মশান কালী মায়ের পুজো শেফালী বেওয়ার হাত দিয়েই যে হবে, তা গ্রামবাসীরাও বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকে জানতে পেরেছিলেন । অবশেষে সেই থেকে শুরু কালী মায়ের পুজো। যা আজ শেফালী বেওয়ার কালীপুজো নামে পরিচিত।
মালদার হবিবপুর ব্লকের মধ্যমকেন্দুয়া গ্রামে রয়েছে শেফালী বেওয়ার বাড়ি। বাড়ির সামনেই রয়েছে দেবী মায়ের বেদী। বৃদ্ধা শেফালী বেওয়ার স্বামী দীর্ঘদিন আগেই মারা গিয়েছেন । বর্তমানে শেফালী বেওয়ার দুই সাবালক ছেলে বাইরে কাজ করেন। পরিবারে একাই রয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা শেফালী বেওয়া। তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একটানা ১১ বছর দুরাদোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। রোগ সারানোর ক্ষেত্রে সব চেষ্টাই করেছিলাম। কিন্তু কোনরকম ভাবেই সুস্থ হতে পারে নি । ৪০ বছর আগেই স্বপ্নাদেশে মায়ের দেখা পাই। মশাল কালি রূপে দেবী মাতা বারবার পুজো দেওয়ার কথা আমাকে বলে । কিন্তু আমি ভিন সম্প্রদায়ের হওয়াই প্রথমে কাউকে কিছু জানায় নি। কিন্তু একটার পর একটা অঘটন ঘটেই চলেছিল। যখন গ্রামবাসীদের জানালাম , তখনও কিছুদিন থেমেছিলাম। পুজো করবো কি করে, আমি যে অন্য সম্প্রদায়ের। গ্রামবাসীদের মধ্যে নানান ঘটনা ঘটতে থাকে । অবশেষে সবাই আমাকে দেবী মাতার পুজোর শুরু করার কথা বলেন। এমনকি কোন মৃৎশিল্পী প্রতিমা বানাবেন তাও স্বপ্নাদেশে পেয়েছিলাম। বংশপরম্পরায় আজও সেই মৃৎশিল্পীর পরিবার দেবী মূর্তি বানায়।
শেফালী বেওয়া বলেন , আমাদের এই বেদিতে যে দেবীমাতা জাগ্রত, তা অমাবস্যার তিথিতে কালী পুজার দিন এসে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। যে যা মানত করে তা পূরণ হয়। তাইতো প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্তদের সমাগম হচ্ছে । ভক্তিভরে বেদীতে মাথা ঠুকলেই অনেক জটিল অসুখ সেরে যায়, এই বিশ্বাস আজও সকলের মনে রয়েছে। গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে আজও এই পুজো চলে আসছে। অমাবস্যার রাতে পুজোর দিন আমি মায়ের বেদির সামনেই বসে থাকি। পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণে যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। মনে হয় নূপুর পায়ে কে যেন ঘোরাফেরা করছে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস মানুষের মঙ্গল কামনায় দেবী মাতা সব সময় পাশেই রয়েছেন।
শেফালী বেওয়ার কালীপুজোর সহযোগীকারী এক কর্মকর্তা চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, এই কালীপুজোর মাধ্যমে আমরা সম্প্রীতির অনন্য নজির দেখিয়ে দিয়েছি। শেফালী বেওয়ার হাত দিয়েই পুজোর শুরু । দেবীমাতা আজও বিরাজমান আমাদের গ্রামের বেদীতে। শেফালী বেওয়ার বয়স হয়েছে। তাই গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করে পুজোর আয়োজন করে। কিন্তু মানুষের কাছে শেফালী বেওয়ার কালী পুজা নামেই এই পুজো পরিচিত রয়েছে।