মলয় দে নদীয়া: দিশারী পরিবারের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বিশ্ব আদিবাসী দিবস ‘শিকড়ের টানে’ উদযাপন হলো দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন কুমিরমারি আইল্যান্ড, নদিয়ার চাঁদপুর আদিবাসী গ্রাম এবং রামনগর চর পুরাতন পাড়া শান্তিপুরে। গত ৬ থেকে ৯ই আগস্ট অর্থাৎ চার দিনব্যাপী বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে উদযাপন করা হলো আদিবাসী দিবস।
সেন্সর বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় দু’লক্ষের বেশি আদিবাসী এই সুন্দরবন অঞ্চলে বসবাস করেন। নদিয়া এবং সুন্দরবনের আদিবাসীদের নিজ রাজ্য ছেড়ে এ রাজ্যে নিয়ে আসার কাহিনী একেবারেই আলাদা। নিয়ে এসেছিলেন ইংরেজ সরকার। মূলত নদীয়ার আদিবাসীদের আনা হয়েছিল নীল চাষ এবং রেললাইন পাতার কাজে অপরদিকে সুন্দরবনের আদিবাসীদের আনা হয়েছিল ভূমি সংস্কারের কাজে। ভাবতে অবাক লাগে যারা এই ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বাঘের পেটে গিয়ে গভীর জঙ্গলকে আবাদী জমিতে পরিণত করল তারাই আজ ভূমি থেকে বঞ্চিত।নদিয়া এবং সুন্দরবনের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এবারও একসাথে উদযাপন করেছে এই দিবসটি। উদ্দেশ্য দুই জেলার আদিবাসী লোক সংস্কৃতির সেতু বন্ধন সাথে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা , স্বাস্থ্য এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যাতে ভবিষ্যতে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং নিজ সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাতে সহজ হয়।
প্রতিটি বছর আয়লা এবং যশের মত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয় এই দ্বীপের মানুষরা।এরা মূলত চাষবাস আর মাছ ধরায় তাদের জীবিকা চালায়।বারবার নোনা জল জমিতে ঢোকে অন্যদিকে নদীতে মাছ ধরা সব সময় হয় না ফলে চাষবাস বন্ধ। ইতিমধ্যে বহু মানুষ পেটের দায়ে আইল্যান্ড ছেড়ে ভিনদেশে গেছেন কাজের তাগিদে। আইল্যান্ডের শিশুরা কেউ মা-বাবার সাথে অন্য জায়গায় পাড়ি দিয়েছে, কেউ আবার আত্মীয়র কাছে পড়ে রয়েছে এই দ্বীপে ফলে এদের পড়াশোনা স্বাস্থ্য সংস্কৃতি সবটাই বেশ ক্ষতি হচ্ছে ।
এই গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দিশারী পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পাশে দাঁড়ানোর । গত তিন বছর আগে আজকের এই আদিবাসী দিবসে দিশারী তার আরো একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত করেছিল এই কুমিরমারী আইল্যান্ডে ।
নদীয়ার আদিবাসী সমাজের পাশাপাশি কুমিরমারী আইল্যান্ডের আদিবাসীদের পাশে ও দিশারী পরিবার দাঁড়িয়ে আছে। এই বছর প্রভাত ফেরী, শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার সামগ্রী বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, ফুটবল খেলা, রেইনকোট বিতরণ, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল বিশ্ব আদিবাসী দিবস।
দিশারী সংগঠনের অন্যতম মানসী দাস জানান
“আমরা বিশ্বাস করি এই দ্বীপের মানুষরাও একদিন তাদের যোগ্য সম্মান ফিরে পাবে”।