মলয় দে, নদীয়া :-থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে/দেখব এবার জগৎটাকে।কবির লেখনি আজও উদ্দীপ্ত করে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের। আর তারই জলন্ত নিদর্শন নদীয়ার শান্তিপুরে। শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের নবীন পল্লীর সদ্য স্নাতক হওয়া রাজিব কুমার রায় , পেশায় যন্ত্র চালিত তাঁত শ্রমিক। বাবা সুজন রায় এবং মেজ ভাই ব্যাঙ্গালোরে থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা দাদু ঠাকুমা এবং ছোট ভাইকে নিয়ে সে শান্তিপুরে থাকে। সারা ভারত ঘুরে আসতে আনুমানিক তার দু’বছর লেগে যেতে পারে ।
অত্যন্ত অভাবী পরিবারের একদিকে উপার্জন বন্ধ অন্যদিকে, রাস্তায় চলার পথে নিয়মিত খরচ। তবে এক্ষেত্রে রাজীবের বাবা এবং ভাইয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মা ঠাকুমা আবেগপ্রবণ হয়ে চোখের জলেই বিদায় জানালো রাজীবকে।
পাড়া-প্রতিবেশীরা, জানলো রাজিবের দেবাধিদেব মহাদেবের প্রতি আনুগত্য, কেউ জানলো নিছকই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ। তবে রাজিবের বার্তা পরিবেশেরও। কেদারনাথে পৌঁছে প্রকৃতির সবুজ এবং জল রক্ষার আর্জি জানাবে ভগবানের কাছে।
প্রতিদিন ৮০ কিলোমিটার, সাইকেল চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সে, তবে বর্ষা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনুযায়ী বিভিন্ন রকম সামগ্রী সাইকেলেই বাধা। রান্নার যাবতীয় উপকরণ তার সাথেই আছে তবে সব সময় তা সম্ভব না হলে মাঝেমধ্যে কিনে খেতে হবে। রাতে থাকার বিষয়ে, কোনো ধর্মীয় স্থান এবং পেট্রোল পাম্পকেই বেছে নিয়েছে সে। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে, রাস্তার সমস্যা মিটবে রাস্তাতে এমনটাই মনে করছে সে। তবে শান্তিপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে সে একটি ছাড়পত্র সাথে নিয়েছে সাথে পরিচয় পত্র।
রাজিব জানায় এই প্রথম নয় এর আগেও, দেড় মাস আগে সাইকেলে দীঘাতে গিয়েছিল সে। তারও আগে বোলপুর শান্তিনিকেতন, মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি, তারকেশ্বর বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান গিয়েছিল একাই। রাজীবের কথায় সাইকেলে যাওয়ার বন্ধু পাওয়া যায় না, তবে পেলে ভালো হতো, না পেয়ে একাই। তবে এবারে ভারত ভ্রমণ সম্পূর্ণভাবে একা তা নয়, instagram থেকে আলাপ হওয়া মেঘালয়ের অমিত সিং হরিয়ানার অমিত কুমার তারাও একই উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হয়েছে তাদের সাথে দেখা হবে কেদারনাথে। ভাষাগত সমস্যা কিছুটা থাকলেও, একসাথে চলার সুবাদে সে ভাষাও রপ্ত হবে বলে আত্মবিশ্বাসী সে।
ঝাড়খন্ড থেকে বিহার, ইউপি, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, লাদাখ, কাশ্মীর, এভাবে উত্তর ভারত ঘোরার পর, দক্ষিনে কন্যাকুমারী পর্যন্ত যত মন্দির আছে সেই সবকটাতেই তার পৌঁছানোর ইচ্ছা আর সেই কারণেই একটু সময় বেশি লাগবে। তবে সে আপাতত নিজের শারীরিক পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলে দু বছরের মধ্যে সাইকেলে ভারত ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আন্দাজ করছে।