মলয় দে, নদীয়া:- ভাঙা ঘরে দিব্য দিন গুজরান। ফুটি ফাটা চালে অবাধে খেলা করে রোদ। ঝড় বৃষ্টিতে তক্তপশের নিচে আশ্রয়। এভাবেই দিন কাটছে নদীয়ার শান্তিপুর গয়েশপুর পঞ্চায়েতের আলুইপাড়া এলাকার বাম আমলের তিনবারের পঞ্চায়েত সদস্য বিজয় মন্ডলের। শুধু কি তাই! মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় দুই বৌমাকে দিয়ে আরো দশটি বছর অর্থাৎ মোট ২৫ বছরের গ্রাম শাসন ছিলো তার হাতেই।
শারীরিক পরিস্থিতির কারণে এবং সাংগঠনিক কারণে বিগত দুটো বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি তিনি।
কিন্তু এবারে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ার আহব্বানে আবারো সামিল হয়েছেন ৭৪ বছরের অপরাজেয় বিজয় মন্ডল।
চারিদিকে পঞ্চায়েত স্তরে যেখানে দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ সেখানে ব্যতিক্রমী . বিজয় বাবু রাজনৈতিক জগতে বিরল চরিত্র। শান্তিপুর অঞ্চলের সবচেয়ে প্রবীণ পঞ্চায়েত প্রার্থী। তার সততা নিয়ে প্রশংসা শোনা গেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যেও।
স্মৃতি রোমন্থন করে… জানালেন, আশির দশকে হুগলি জেলা থেকে পাড়ি জমান শান্তিপুরে। প্রবীণ বাম নেতা প্রয়াত অজিত দাসের সান্নিধ্যে কৃষক আন্দোলনের মধ্যেদিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ।
নিজের হাতে একাধিক আবাস প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দিয়েছেন সাধারণ ভোটারদের। তিনি কখনো ঘরের জন্য আবেদন করেননি। পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে বাড়তি সুবিধা কখনো ভোগ করেনি। আজও দিনের আলো ফুটলে বেরিয়ে পড়েন খেতের কাজে। ক্ষেত মজদুর দের সঙ্গে তার নারীর টান। কাজে যাবার সময় লালপাতাকা টা সাথে নিয়ে যান নিজের প্রচারের জন্য। ফ্লেক্স ব্যানার হোডিং দেওয়াল লিখন, কিছুই নেই, নেই অর্থও। তাই ছেলে বউমারা, তার হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ঘরকন্যা সামলিয়ে। চারিদিকে এত আড়ম্বরতা চাওয়া পাওয়া তার মধ্যে, তার এই বিবর্ণ প্রচার সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ১০০ শতাংশ,সেটাই আমার পুজি। কখনো বিক্রি হবো না, অন্যায়ের সাথে আপোষ করবো না সেই ভরসায় আবারো গ্রাম সভার দায়িত্বে আসছি আমি।
এই প্রসঙ্গে তার সহকর্মীরা জানালেন ” দাদা জিতবেন কারণ উনি আমাদের নিত্যদিনের কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে ওতপ্রভাবে জড়িত। শ্রেণী সংগ্রামের কথা বামেরা বলে তার মূর্ত প্রতীকি উনি” । এতকিছুর পরেও একটুও কৃতিত্ব নিতে নারাজ বিজয় বাবু। তার দাবি, মানুষের ন্যায্য অধিকারের দাবি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা আমাকে নির্বাচিত করেছে অতীতে , এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।