সরস্বতীর কথা

Social

মানব মন্ডল: মুক্তবেণী ত্রিবেণী। পূবে যমুনা,পশ্চিমে সরস্বতী,দক্ষিণে হুগলী। ত্রিবেণী তীর্থে এই ত্রিধারায় বিভক্ত হয়েছেন মা গঙ্গা। এর মধ্যে সরস্বতী নদী দক্ষিণ পশ্চিমে গিয়ে প্রাচীন সপ্তগ্রাম বন্দর ছুঁয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চলতে চলতে দু ধারে ফেলে রেখে গেছে কত ইতিহাস। শরৎচন্দ্রের স্মৃতিধন্য দেবানন্দপুর ছুঁয়ে অধুনা চন্দননগরের পশ্চিমে ছুটিপুর হয়ে চলে গেছে আরও দক্ষিণে। শ্রীরামপুরের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই নদী আরও দক্ষিণে হাওড়া জেলায় প্রবেশ করেছে। অবশেষে হাওড়া জেলার সাঁকরাইলের কাছে এই নদী আবার হুগলী নদীতে মিশেছে। হুগলী জেলার জনাই, বাকসা, চন্ডীতলা সবই সরস্বতী তীরবর্তী জায়গা। মোটামুটি শ্রীরামপুরের নিকটবর্তী স্থানের পর বর্তমানে সরস্বতীকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

ব্যাপক নগরায়ণ শিল্পায়নের মাধ্যমে মা সরস্বতী দখলীকৃত হয়েছেন। কানা নদী থেকে খাল কেটে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ এই নদীকে বাঁচাবার সামান্য প্রচেষ্টা করেছেন বটে কিন্তু নদীখাতের যা অবস্থা,অল্প নাব্যতার কারণে বেশী জল জমে নদী উপচে পড়া খুবই স্বাভাবিক। তখন আবার মশা,জলবাহিত রোগ ইত্যাদির কারণে জনসাধারণ জেরবার হবে। নগরায়ণ যেখানে একবার প্রবেশ করে সেখানে পুরনো দিনের মাটির সোঁদা গন্ধ ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল।বর্তমানে সরস্বতীর তীরবর্তী যে সব গ্রাম্য জনপদ রয়েছে তাদের অবস্থা খুব খারাপ।

সরস্বতীর খাতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ জল ছাড়া যেত তাহলে হয়ত এইসব গ্রামের চাষীদের চাষের খুব সুবিধা হত। কিন্তু বেআইনি প্রমোটারি ও দখলদারি কবল থেকে রেহাই পায় নি সরস্বতীও। ১৯২০ সালে ওমালি সাহেব যে ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার লেখেন তাতে তিনি বলেছেন যে এই নদী দেড়শ বছর আগেই মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। তার আগে এই নদীই ছিল গঙ্গার প্রধান গতিপথ। আজকের চন্দননগর,চুঁচুড়া,শ্রীরামপুর তাই অপেক্ষাকৃত নবীন জনপদ। ব্যক্তিগতভাবে আমি ঈশ্বরের সর্বব্যাপীতায় বিশ্বাসী। বৈদিক সরস্বতী নদীরুপা ছিলেন,বঙ্গের সরস্বতীও নদীরূপা। তিনি বিদ্যা-বুদ্ধি বাড়িয়ে দেন কিনা জানি না তবে তাঁর তীরেই একসময় বাংলায় গড়ে উঠেছিল অজস্র টোল,চতুষ্পাঠী। টোল চতুষ্পাঠীর যুগ গেছে। তার বদলে তৈরী হয়েছে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চতুষ্পাঠীর পাশে আর সরস্বতী বয়ে চলেন না। তারবদলে প্রতিষ্ঠানের অন্দরে তিনি মৃন্ময়ীরূপে বিরাজ করেন বছরের এই একটি দিন। দেহভান্ড থেকে যদি ব্রহ্মাণ্ডের বোধ জাগ্রত হয় তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই নদীকে রক্ষা করার বোধ জাগ্রত হোক।

Leave a Reply