মলয় দে নদীয়া :- স্ট্রিং অপারেশন শুনেছেন এমনকি টাকা নেওয়ার ভিডিও দেখেছেন টিভির পর্দায়।
তবে বাড়িতে যদি এ প্রজন্মের পড়াশোনা করা ছেলে-মেয়ে থাকে, তারাও গোয়েন্দাগিরিতে কম যায় না।
আজ মেয়েদের করা সেই ভিডিও না থাকলে কিছুতেই প্রমাণ করাতে পারতেন না তিনি এতগুলো টাকা দিয়েছেন প্রতারককে।
প্রতারণার চরম নিদর্শনটি নদীয়ার আড়ংঘাটা থানার নওপাড়া পোস্ট অফিস হরিপুরের। সেখানের বাসিন্দা বছর ৪৫ এর অশোক মন্ডল পেশায় টোটো চালক। তবে মেকানিক্যাল ফেব্রিকেশনের কাজ করতে দেশের মধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং মেয়েদের বিয়ের খরচ জোগাতে ভেবেছিলেন দেশের বাইরে যাবেন। কিন্তু যাওয়া বললেই তো আর যাওয়া নয়! সঠিক এজেন্সির মাধ্যমে, ভালো কোম্পানিতে পাসপোর্ট ভিসা সমস্ত কিছু কাগজপত্র ঠিক করার জন্য বিশ্বস্ত মানুষ প্রয়োজন। দুই একটি এ ধরনের এজেন্সিতে গিয়ে, তিনি শুনেছিলেন শান্তিপুরের গোড়ালিয়া নতুন পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মিলন সরকারের কথা। তিনি নিজে উপযাজক হয়ে প্রথম ফোন করেন, বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার ব্যাপারে। মিলন সরকার, বলেন মাসিক ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার মাইনের কাজ তিনি পাইয়ে দেবেন, ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এককালীন পেলে। এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ বেশ কয়েকটি ভিডিও কলের মাধ্যমে বিদেশে তার হাতে নিযুক্ত বিভিন্ন কর্মীদের কথা শোনান অশোক বাবু।অশোক বাবুর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে মিলন সরকার।
অশোক বাবু ভাবেন মাত্র দেড় মাসের মাইনে, পড়ে থাকলো সারা বছর। তবে তিনি শর্ত করেন ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার নগদ এবং প্লেনে ওঠার সময় ৪০ হাজার টাকা দেবেন।
মিলন সরকারের সাথে অশোক মন্ডল বসে কথা বলেন তার নিজের বাড়িতে। মিলন সরকার পুরনো ভিসা পাসপোর্ট সংক্রান্ত খুঁটিনাটি এত ভালো তথ্য দেন যাতে মন ভুলে যায় , অশোক বাবুর।
তবে অশোকবাবু একটি শর্ত করেছিলেন, টাকা নেওয়ার সময় তার ভোটের কার্ড এবং আধার কার্ডের জেরক্স দিতে হবে মিলন সরকারকে।
উভয়পক্ষের শর্তাবলী মেনে নিয়ে, বিদেশ যাত্রার কাজকর্ম এগোতে থাকে। সেইমতো পরবর্তীতে অশোকবাবুর বাড়িতে মিলন সরকার সাথে দুজন বন্ধু নিয়ে উপস্থিত হলে, তিনি ধার দেনা করে যোগাড় করা দু লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা নগদ তুলে দেন, মিলন সরকারের হাতে।
বাবার এ ধরনের কাজে মেয়েদের কিছুটা দুশ্চিন্তা হলেও, তা প্রকাশ করতে পারিনি, তবে অত্যন্ত গোপনভাবে সকলের অলক্ষে একটি ভিডিও তুলে রেখেছিলো।
এরপর দুমাস গড়িয়ে ছমাস অবশেষে বছর কাটে। বিদেশ যাত্রার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেনা। এরপর মিলন সরকারের যোগাযোগ নাম্বার বন্ধ হয়ে যায়। ভোটের কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী, বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে অশোক বাবু জানতে পারেন , তার বাবা রবিন সরকার মৃত। অন্য সদস্যরা জানায়, মিলন কখন কোথায় থাকে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এরপরেও বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হলে, বাধ্য হয়ে গতকাল তিনি শান্তিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে শান্তিপুর থানার পুলিশ।
যদিও এ বিষয়ে প্রতারণায় অভিযুক্ত মিলন সরকারের পরিবারের সদস্যরা মুখ খোলেনি। তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে মিলন সরকার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকদিন যাবত বাড়িতে আসছেন না।