৯৯ বছরেও দিনের এক তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করেন বই পড়ায় ! বিশ্ব বই দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য 

Social

মলয় দে নদীয়া :-আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনেই বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে। তবে এ রাজ্যে গ্রন্থাকার দিবস পালিত হলেও বই দিবসে খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।

বর্তমান ডিজিটাল পড়াশোনা বাড়লেও হাতে নিয়ে বই পড়া তলানিতে ঠেকেছে, পাঠ্যপুস্তক যদিও বাধ্যতামূলক পড়তেই হয়, কিন্তু গল্প বা অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ক বই ডিজিটালে, পড়াশোনা মানে শুধু সারাংশ , তাই বিস্তারিত জানার থেকে বিরত থেকে যাচ্ছেন পাঠকরা এমনই অভিমত বিভিন্ন লাইব্রেরিয়ানদের।
তবে আজ রবিবার, সরকারি উদাসীনতায় রুগ্ন লাইব্রেরীর মতই চেহারা , এই বিশেষ দিন উদযাপনেও।
তবে আমরা আজ এক প্রবীণ পাঠকের সন্ধান পেয়েছি নদীয়ার শান্তিপুর শহরের আশানন্দ পাড়ায়। যেখানে পূর্ণা মঠ, ৯৯ বছর বয়সেও দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময়ে বই পড়েই কাটান। বয়সজনিত কারণে অন্যান্য কাজকর্ম পরিবারের সাহায্য নিলেও, বই পড়ে শোনানোর জন্য ডাকেন না কাউকে।

তিনি বলেন, তার দিদিমা ঘর কন্যার কাজ ছাড়াও ছবি আঁকা সেলাই ফোঁড়াই রান্না সবেতেই ছিলেন পারদর্শী, তার মধ্য দিয়েও তিনি নিয়মিত পত্র পত্রিকা এবং বিভিন্ন লেখক লেখিকার নানান ধরনের গল্প উপন্যাস সহ ভ্রমণ কাহিনী পড়তেন। ছোটবেলা থেকে এই আগ্রহ জন্মায় তার মধ্যেও। বর্তমান ৯৯ বছর বয়সে চোখের জ্যোতি কিছুটা কমলেও, রাতে পর্যাপ্ত আলো দিয়ে এখনো বই-পুস্তক পড়েন তিনি। আজ পড়ছিলেন বাগবাজারের কাহিনী। জানালেন ইতিহাস সম্বন্ধীয় বিষয়ে তার বিশেষ আগ্রহের, রাজনীতি এবং অন্যান্য খবরা-খবর টিভিতে কিছুটা দেখলেও পড়ে জানতেই বেশি ভালো লাগে। স্বামী বেঁচে থাকাকালীন, বিভিন্ন ধরনের পত্র পত্রিকা এমনকি বিদেশী বই পর্যন্ত বাড়িতে আসতো। তার তৈরি লাইব্রেরী এবং পরিবারের অপর এক সদস্যের তৈরি আরেকটি লাইব্রেরীর বেশিরভাগ বই, তিনি পড়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দুটি লাইব্রেরী সামলানো পুত্র সুশান্ত মঠের এনে দেওয়া বিভিন্ন বই তিনি পড়েন এখন। এ প্রসঙ্গে সুশান্ত মঠ বলেন, শিশুদের যেমন লজেন্স খেলনার বায়না, মায়ের তেমনি বইয়ের। নতুন বই একসাথে বেশি করে আনলে, সপ্তাহে একটা দুটো করে উনাকে দেওয়া হয়, না হলে একভাবে সমস্ত বই ঘুম নাওয়া খাওয়া-দাওয়া ভুলে শরীর খারাপ করে ফেলবেন। তবে মায়ের অসাধারণ আঁকার হাত থাকা সত্ত্বেও, লাইব্রেরী এবং সংসারের বিভিন্ন দায়দায়িত্ব সামলাতে তার ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি বলেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। তবে বই পড়ার বিষয়ে এতটাই আগ্রহ এখনো, মাঝেমধ্যেই শরীরের কথা ভেবে জোর করে বই কেড়ে নিতে হয় ওনার কাছ থেকে। কখনো কখনো আলমারি বন্দি করে লুকিয়ে রাখতে হয়।
পূ্র্ণা দেবী এবং পুত্র সুশান্ত মঠ শোনালেন নানান বই কাহিনী।

মা পূর্ণা দেবী বর্তমান ডিজিটাল পড়াশোনা কে স্বাভাবিকভাবে, কালের নিয়ম বলে মেনে নিলেও পুত্র সুশান্ত বাবু,পুরনো বইয়ের গন্ধের এক উপলব্ধি এবং নতুন বই প্রথম উন্মোচিত করার গন্ধের স্বাদ উপভোগ করেন চেটেপুটে।

আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের মতন পাঠকদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

Leave a Reply