মলয় দে নদীয়া :-নদীয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে বেড়ে ওঠা প্রায় দশ বছরের প্রাচীন একটি মেহগনি গাছ গোড়া থেকে তুলে প্রায় ৫০ মিটার দূরে মাটি খুঁড়ে আবার সেটা বসানো হল। গাছকে বাঁচানোর মানসিকতা নিয়ে পরিবেশ কর্মীরা বিশেষ করে রানাঘাটের নেচার ফার্স্ট ও শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের কর্মীরা মিলে বুধবার এই অসাধ্য সাধন করলেন। বেশ কয়েক বছর আগে নেচার ফার্স্ট এর পক্ষ থেকে রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতাল চত্বরে মেহগনি সেগুনসহ বেশ কয়েকটি নামিদামি গাছ লাগানো হয়েছিল। নেচার ফার্স্ট এর কর্মীরাই সেই গাছগুলোর দেখভাল করে ছেন।ফলে গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে ইতিমধ্যেই। যদিও রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতাল চত্বরে নতুন ১০০ বেডের বিল্ডিং তৈরি হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি গাছ কাটা বা সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই সেই বিষয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। যদিও পরিবেশকর্মীরা সেই গাছ কেটে ফেলার পক্ষে বিন্দুমাত্র নন। তাই তারা রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত নিজস্ব উদ্যোগ এবং নিজস্ব খরচে রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতাল চত্বরের একটি মেহগনি কাজ গোড়া থেকে তুলে প্রায় ৫০ মিটার দূরে রানাঘাট মর্গের সামনে মাটি খুঁড়ে সেই কাজ আবার নতুন করে বসিয়েছেন। যদিও এই কাজে তাদের বিশেষ সহযোগিতা করেছে পূর্ত দপ্তরের বেশ কয়েকজন জেসিপি মেশিনের কর্মী। কারণ গোড়া থেকে মাটি খুঁড়ে জেসি পি মেশিনের মাধ্যমেই সেই গাছ তোলা হয়েছে। এরপর সেই গাছ জেসিবি মেশিনের মাধ্যমেই প্রায় ৫০ ফুট দূরে রানাঘাট মর্গের সামনে নিয়ে গিয়ে মাটি খুঁড়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে দুটি বড় গাছ একই রকম ভাবে এক জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গর্ত খুঁড়ে সেই মাটিতে গোবর সার দিয়ে এরপর অ্যান্টিফাঙ্গাল গাছের কান্ডে এবং গোড়ায় দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে প্রায় দশ বছরের প্রাচীন একটি মেহগনি গাছ। এই বিষয়ে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক সুশান্ত মট জানিয়েছেন,’এর আগে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে একই রকম ভাবে দুটি বড় গাছ প্রচুর লোকজনের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে তুলে অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। দুটি কাজ বর্তমানে জীবন্ত অবস্থায় খুব ভালোভাবেই রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে রানাঘাট মহাকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে রানাঘাট নেচার ফাস্ট এর কর্মীদের সহযোগিতায় এবং পূর্তদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মীর সহযোগিতায় একটি মেহগনি গাছ ঘোড়া থেকে তুলে প্রায় ৫০ মিটার দূরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সমস্ত পদ্ধতি মেনে যেভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তাতে আশা করছি গাছটি বেঁচে যাবে।’নেচার ফার্স্ট এর কর্মী সভা মুকেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন,’আমরা বেশ কয়েক বছর আগে রানাঘাট মহাকুমার হাসপাতাল চত্বরে বেশ কয়েকটি শিশু গাছ লাগিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত প্রায় ২৫ টি গাছ বেঁচে রয়েছে। হাসপাতালের বিল্ডিং তৈরি করার জন্য একটি মেহবনী কাজ সরানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সে কথা জানার পর আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগ এবং নিজস্ব খরচে জেসিপি মেশিনের মাধ্যমে সেই গাছ তুলে সরিয়ে প্রায় ৫০ ফুট দূরে প্রতিস্থাপন করেছি।’এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে সুপার ডাক্তার প্রহ্লাদ অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন,”এটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। কোন জীবন্ত গাছ আর কাটার প্রয়োজন পড়বে না এই পদ্ধতিতে গাছ এক জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হলে আর গাছ কাটার কোন প্রয়োজন নেই। পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা হবে।’