মলয় দে নদীয়া :-নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের বাগআঁচড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত লক্ষ্মীনাথপুর থেকে শান্তিপুর কলেজ প্রায় ১০ কিলোমিটার, আর সেখান থেকে সাইকেলে যাতায়াত করে পড়াশোনা করেন বিশ্বনাথ প্রামানিক। বর্তমানে তিনি এমএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, বয়স মাত্র ষাট। ৫২ বছর বয়সে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়া।
শান্তিপুর কলেজের নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে, বই নিতে এসে কৃষক পরিবারের এই ছাত্রের সাথে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হলো আজ।
শোনালেন তার, বিলম্বিত পড়াশুনার কারণ, ভবিষ্যতের ইচ্ছা, অদম্য মনের জোরের রহস্য।
১৯৭৮ সালে বিশ্বনাথ বাবুর বয়স ছিলো ১৬। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বন্যায়, অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে ভেসে যায় বইপত্র। অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারের সাত ভাই বোন, দাদু ঠাকুমা এবং মা বাবার গোটা পরিবারের খরচের ভার ছিলো , অন্যের জমিতে চাষ করা বাবার কাজের উপর। তাই নতুন করে বই কিনে আর পড়াশোনা সম্ভব হয়নি। বাবার সাথে লেগে পড়েন, চাষের কাজে, কখনো বোনেন তাঁত, কখনো বা সাইকেল মেরামতির কাজ করে, ছয় ভাই বোনকে পড়াশোনা শেখাতেন। বাবার সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে তিন বোনকে সুপাত্রস্থ করেন।, ভাইদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাঝেই হয় পিতৃবিয়োগ। এখন অবশ্য, সকলেই প্রতিষ্ঠিত। সকলেই রয়েছেন একসাথে একান্নবর্তী পরিবারে। সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে অনেকটাই, তবে বিবাহ করে নিজের সংসারের কথা ভাবতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি, বয়স পেরিয়েছে পঞ্চাশের কোঠা। কোথাও যেন একাকীত্ব গ্রাস করতে থাকে তাকে। সিদ্ধান্ত নেন আবারও পড়াশোনা শুরু করবেন। শান্তিপুর মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সহযোগিতায়, মাধ্যমিক পাস করেন। কিন্তু সে সময় প্রাইভেটে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিলোনা শান্তিপুরে, তাই বাধ্য হয়ে বীর নগরের একটি রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তার। শান্তিপুর কলেজের নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মী ও শিক্ষকগণ তাকে অনুপ্রেরণা যোগায়, প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় এভাবেই স্নাতক হন ভালো নাম্বার নিয়ে। বর্তমানে তিনি এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আগামী ১৯ শে মার্চ তার পরীক্ষা। প্রস্তুত হয়েছেন অগাধ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। এরপরেও যদি, শিক্ষকরা আগের মতই সহযোগিতা করেন তাহলে তিনি পি এইচ ডি করতেও প্রস্তুত।
কিন্তু এ বয়সে তো আর চাকরি হবে না! তাহলেও কেন পড়াশোনা? উত্তরে বিশ্বনাথ বাবু বলেন, সংসারের চাপে যেমন নিজের কথা ভাবার সময় পাইনি তেমনি , সমাজের কথাও। তাই আমার মতন পড়াশুনো ছেড়ে দেওয়া বৃদ্ধদের, অথবা গরিব দুস্থ শিশুদের পড়াতে চাই। গবেষণা করতে চাই, লোকসংস্কৃতি নিয়ে।
অন্যদিকে , নেতাজী মুক্ত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউনিট স্থাপনের পর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বজৈষ্ঠ্য ছাত্র তিনিই। পিতৃতুল্য ছাত্রের এই মনোবল এবং সফলতা দেখে কুর্নিশ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রত্যেকে।