মলয় দে, শান্তিপুর:- নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের বড় জিয়াকুড় গ্রামের প্রথম শ্রেণীর পড়ুয়া ইশা রাজোয়ার । সবাইকে তাক লাগিয়ে এবছর করিমপুর পশ্চিম চক্র আয়োজিত রেগুলেটেড মার্কেট মাঠের নদীয়াজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের ৩৮ তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লং জাম্পে ২.৯৭ মিটার দীর্ঘ লাফ দিয়ে জেলার মধ্যে প্রথম হয়ে ক্রীড়া মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে । শুধু এখানেই শেষ নয় আলু দৌড়েও তৃতীয় হয়েছে সে, পরিবার থেকে জানা যায় পায়ে চোট না লাগলে এক্ষেত্রেও প্রথম হতো ইশাই।
ভাঙ্গা ঘরে জোড়া পুরস্কার মিলতেই, সকাল থেকে এলাকাবাসীর বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস
দেখা যায় ঐ এলাকায়।
এর আগে ব্লক ও মহকুমা স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার সুবাদে জেলা স্তরে খেলার ছাড়পত্র পায়। প্রথম সুযোগে কিস্তিমাত! প্রত্যন্ত গ্রাম্য স্কুল থেকে জেলায় প্রথম স্থান, অবাক করেছে সবাইকে। ইশার স্বপ্ন এই সাফল্য ধরে রেখে বড় হয়ে দেশের জন্য অলিম্পিকের পদক আনা। আগামী দিনে দেশের জন্য স্বর্ণপদক এনে নাম উজ্জ্বল করুক এলাকার এমনটাই স্বপ্ন ইসার মা বাবার , বাধা একটাই- নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার।
শান্তিপুরের এই খুদের সাফল্য উদযাপনে এগিয়ে এসেছেন সর্বস্তরের মানুষ। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অলিভিয়া সন্ন্যাসী সকাল থেকে মিষ্টি বিলি করছেন এলাকায়। তিনি বলেন, এই গ্রামে এই বিদ্যালয় থেকে এর আগেও খেলায় বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী পুরস্কার পেলেও জেলা স্তরে এই প্রথম। আবেগে বললেন অভাবেই প্রতিভার জন্ম হয়। আগামী দিনে ইশার পাশে থাকার, ইঙ্গিত দিয়ে ভাঙা ঘরের পরিবর্তে সরকারি গৃহ আবাস যোজনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়টি খেয়াল রাখবেন বলেই আমাদের জানালেন।
এত সাফল্যের পরেও চিন্তা যাচ্ছে না বাবার, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করার ক্ষমতা রয়েছে মেয়ের। এই সাংসারিক অভাবের সাথে লড়াই করে কিভাবে তার স্বপ্ন পূরণ করবেন তা ভেবে কুল করতে পারছেন না ইশার বাবা। তিনি জানান “অভাবের কারণে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, কোনদিন ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে এবার পঞ্চায়েত এবং বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাশে থাকার আশ্বাস পেয়ে ইশা যে অনেক দূর পৌছাবে, সেই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।
যে স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে ইসার এই সাফল্য সেই বড় জিয়াকুড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল সরকার জানান ” ক্রীড়া সবসময় উপেক্ষিত থাকে আমাদের ছাত্রীর সাফল্য এবার থেকে একটি করে পিরিয়ড শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রশিক্ষণের জন্য রাখা থাকবে এবং সেটা সারাবছর। তবে ওর পায়ে না লাগলে, আলু দৌড়েও প্রথম হত। তিনি ছাত্রীর প্রতি অগাধ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন আগামীতে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতা জলপাইগুড়িতে হতে চলেছে সেখানেও , ইশাই চ্যাম্পিয়ন হবে।
নদীয়ার শান্তিপুরের গর্ব ইশার মধ্যে জেতার খিদে প্রবল। সেই জেতার খিদেকে পাথেয় করে ঈশাকে আরও অনেক দূর স্থির সংকল্পে এগিয়ে যেতে হবে। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যে বাংলার ক্রীড়াজগৎ উজ্জ্বল ও বর্ণময় হবে এমনই আশা করছে ক্রীড়ামহল।