ফুটবলের প্রতি বাঙালির চিরপরিচিত আবেগ এবং উন্মাদনাকে এবার সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে তুলে ধরছে রামনগরের ‘পেজ ইলেভেন’ ক্লাব। থিমের নামকরণ করা হয়েছে ‘ফুটবলিয়ানা’। এই ক্লাবের পুজো এবার ১৩তম বর্ষে পদার্পণ করল। আজ থেকে ১৩বছর আগের কথা। ১১জন স্কুলছাত্র মিলে একটি ক্রিকেট টিম গড়ে তুলেছিল। সেই স্কুলছাত্ররা এবং আরও কয়েকজন কিশোর মিলে ২০১০সালে একটি ক্লাব গড়ে তোলেন। ক্রিকেট টিমের ১১জন সদস্য রয়েছেন, তাই ক্লাবের নামকরণ করা হয় পেজ ইলেভেন। কিন্তু সময়ের নিয়ম মেনে ক্লাবের সদস্যরা যে যার কাজের জগতের সঙ্গে জড়িয়ে যান। তখন তাঁরা ভাবলেন, এমন একটা মিলোনোৎসবের আয়োজন করা হবে, যেখানে বছরে একবার সকলে মিলিত হবেন, আনন্দও হবে। তখনই তাঁদের বাণীবন্দনা করার ভাবনা মনে আসে। ওই বছরই পুজো শুরু হয়। ক্রিকেট টিম হিসেবে বহু জায়গায় বহু টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে কিংবা এখনও আনে পেজ ইলেভেন। আর প্রতিবছর ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনায় বিভিন্ন থিমে পুজো করে দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে নেয় এই ক্লাব। ২০২০সালে দশম বর্ষের পুজোয় ‘আলোকবর্ষ’ থিমে শুধু আলো দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছিল। ২০২১সালে ১১তম বর্ষে ‘এগারোয় এগারো’ থিমে উপজাতিরদের শিল্পকলা ও লোকসংস্কৃতিকে মণ্ডপে তুলে ধরেছিল ক্লাব। ২০২২সালে ‘শিক্ষার যুগান্তর’ থিমে বর্তমান সময়ের শিক্ষা এবং নব্বইয়ের দশকের শিক্ষা অর্থাৎ অনলাইন ও অফলাইন শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ফুটবলের বিশ্বকাপ। কালজয়ী এবং মহান ফুটবলারদের সম্মান জানিয়ে তাঁদের ছবি মণ্ডপে এবার তুলে ধরা হচ্ছে। পেলে, মারাদোনা, এমবাপে, রোনাল্ডোর পাশাপাশি ভারতীয় ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রী, চুনি গোস্বামী, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোট্রেট ও ছবি মণ্ডপে তুলে ধরা হবে। মাঝখানে থাকবে ফাইবারের তৈরি বিশ্বকাপ। রঙিন আলোকসজ্জায় গোটা থিমটাকেই ফুটিয়ে তোলা হবে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কুমোরটুলি থেকে আনা প্রতিমা থাকছে। প্রতিমার পিছনে ছবিতে আঁকা গোলপোস্ট শোভা বাড়াবে। সব মিলিয়ে মণ্ডপে এলে ফুটবল ষোলো আনা উন্মাদনার মজবেন দর্শনার্থীরা, এমনটাই দাবি ক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যদের। মণ্ডপের ভাবনায় রয়েছেন তনুজিৎ বেরা। ডিজাইনে রয়েছেন অভীক বড়াল। প্রতিমার থিম ভাবনায় রয়েছেন কৌশিক পাল। তিনদিনব্যাপী কচিকাঁচাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দুঃস্থ মানুষজনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বইখাতা, রক্তদাতাদের সংবর্ধনা, চারাগাছ বিলি, খিচুড়ি বিতরণ সহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। যেহেতু ওইদিন প্রজাতন্ত্র দিবস রয়েছে, ভারতমাতাকে সম্মান জানিয়ে বর্ণাঢ্য বাইকর্যালি পরিক্রমা করবে।ক্লাবের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৬৫জন। সম্পাদক সুবীরবিক্রম মাইতি, সভাপতি কাশেম মল্লিক, কোষাধ্যক্ষ সিঞ্চন প্রামাণিক রয়েছেন। তেমনি রয়েছেন বিদ্যুৎ সার, রণিত প্রধান, শোভন আচার্য, সঞ্জয় প্রধান। প্রত্যেক সদস্যই পুজো থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা রয়েছেন সমাজসেবী দীপক সার, পৃষ্ঠপোষক রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিতাইচরণ সার। শুধু পুজোর সময় নয়, বছরের অন্যান্য সময়ে নানা সামাজিক কর্মসূচি নেয় ক্লাব। রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। যশ কিংবা উমপুন ঘূর্ণিঝড়ের সময় খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে ছিল পেজ ইলেভেন। পাশাপাশি করোনা-পরিস্থিতির সময় মাস্ক-স্যানিটাইজার বিলির পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় অর্থসাহায্য কিংবা দুঃস্থ পরিবারের মেয়ের বিয়েতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ক্লাব। ক্লাব সম্পাদক সুবীরবাবু কিংবা সভাপতি কাশেম সাহেব বলেন, আগামীদিনে নতুন নতুন থিমের মধ্য দিয়ে সমাজ সচেতনতার বার্তা তুলে ধরা এবং সামাজিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।