অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :-সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হল হাওড়ার জগাছা থানার সাতাশী দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিনবত্বে মোড়া একটি পঠনমেলা উৎসব। শতাধিক রঙিন ঘুড়িতে সামাজিক বার্তা পদযাত্রা করেছেন পুরোনো নতুন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। নিরক্ষরতা জীবনের অন্ধকার, জলের অপচয় করো না, প্লাস্টিক বর্জন করো, ধর্মের উর্দ্ধে মানুষ্যত্ব , বন্যপ্রাণ আমাদের সম্পদ ।
সেইসঙ্গে এই ঘুড়ির পাশাপাশি চলতি বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের ৫০টি রঙিন দেওয়াল পত্রিকা, নির্বাচিত ৮০ টি শিশুদের তৈরি হস্তশিল্প, একটি প্রতীকী চিড়িয়াখানা এবং বিদ্যালয়ের প্রাচীর জুড়ে বিলুপ্ত হতে যাওয়া বিভিন্ন বন্যপ্রাণীদের হাতেআঁকা কাটআউট । প্রবেশদ্বারে প্রমাণ মাপের দীর্ঘ জিরাফ, একটি বাঁদর —অক্ষর দিয়ে সাজানো ” পঠনমেলা ” । এছাড়াও ছিল শিশুদের বুদ্ধিদীপ্ত মজার খেলার আয়োজন । এখানে শিশুরাই প্রশ্নকর্তা শিশুরাই উত্তরদাতা, শিশুরাই মান নির্ধারণ করে।
চমকপ্রদ দৃশ্য ছিল আরও, মেলা অঙ্গনেই দেখা গেল ৫ / ১০ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা বিক্রি করছে —বেগুনি, ঘুগনি ও পাঁপড়ভাজা, চানামশলা তৎসহ শিশুদেরই তৈরি হস্তশিল্প ।
পঠনমেলার উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা শম্পা দাশ ।সামগ্রিক ভাবে প্রধান শিক্ষিকা যা বললেন, ‘শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আশা-ভরসা । এরা আগামী জীবনে কেউ ডাক্তার , কেউ পাইলট, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিল্পী -সংস্কৃতিপ্রেমী হবে , কেউ সময়ের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জীবিকাই গ্রহণ করবে । এই পঠনমেলার উদ্দেশ্য —কোনও কাজই ছোটো নয় । সব কাজে সব জীবিকাতেই দক্ষতা লাগে এবং সব কাজ সমান সম্মানের । কাউকে ছোট করা নয়, বরং সব শ্রেণীর, সব পেশার মানুষকেই ভালোবাসতে শিখুক ‘ এবং বন্যপ্রাণ ও প্রতীকী চিড়িয়াখানা প্রসঙ্গে আরও জানালেন —- ‘মানুষের অত্যাচারে বিপন্ন এখন বন্যপ্রাণী । অথচ সমান অধিকার আছে ওদেরও আমরাই মানুষেরা নিজেদের জন্য বাসস্থান বানিয়েছি, বৃক্ষ কেটেছি, রাস্তা করেছি —ওদের জন্য ভাবিনি। উপরন্তু মানুষের যথেচ্ছারে বসুন্ধরা আজ বন্ধ্যা হতে বসেছে । আমরা চাই, এই ভাবনা আমাদের শিশুদের মধ্যে সঞ্চারিত হোক যে বন্যপ্রাণীকে ভালো থাকতে দেওয়ার দায় আমাদেরও।
তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী জানা গেল নেতৃত্ব ও আন্তরিক সহযোগিতায় ছিলেন শিল্পী সন্দীপ দেয়াসী । উৎসাহী ভূমিকায় দেখা গেল বর্ষিয়ান সহ শিক্ষিকা মধুমিতা দত্তকে। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও এসেছিলেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুস্মিতা দাস। তিনি পঠনমেলা মঞ্চে এই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ছোট বক্তব্য তুলে ধরেন । আয়োজন ছিল শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য একটি ম্যাজিক শো।