মলয় দে নদীয়া :- নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের আরবান্দী ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচপোতা গ্রামে তরুণ সংঘের মাঠে বিনামূল্যে ছেলে এবং মেয়েদের ফুটবল খেলার শেখানোর কোচিং ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়েদের লক্ষ্য একটাই, কন্যাশ্রী কাপ।
আজ তাদের গ্রামে, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করা দুই পুত্র রাজ এবং আনোয়ারের আইএফএ অনূর্ধ্ব ১৬ বেবি ফুটবল দলে অংশগ্রহণের খবর প্রকাশিত হতেই বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী নিয়ে ওই গ্রামে পৌঁছান শান্তিপুর থানার ওসি লালটু ঘোষ।
রেজিস্ট্রি হওয়া সত্ত্বেও কেন টাকা পান না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা, মাঠে উঁচু নিচু মেরামতি এবং নিয়মিত জল দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা, সর্বোপরী খুদে ষাট সত্তর জন খুদে প্লেয়ারদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। আর এতেই আপ্লুত হয়ে, মেয়েরা জানায় তারা সবে শুরু হওয়া ২০২৩ সালের কন্যাশ্রী কাপ জয় করে নিয়ে আসতে চান তাদের গ্রামে।এবছরের শেষের দিকে যে কন্যাশ্রী ক্লাপ হবে, তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েরা।ওই কোচিং ক্যাম্পে এখনো পর্যন্ত মোট ১২ জন মেয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েরাই বেশি। কেউ সপ্তম শ্রেণীতে কেউ বা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। প্রায় ছয় মাস ধরে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিয়ে আপাতত তাদের লক্ষ্য একটাই, আগামী কন্যাশ্রী কাপে তারা টিম হিসাবে প্রতিযোগিতায় নামবে। ওই প্রতিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাত্রী ঝুমা সরদার এবং রুমা সরদার জানিয়েছেন,’পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা গত ছয় মাস ধরে এই কোচিং ক্যাম্পে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছি ।মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে অনেকে অনেক রকম কথা বলতে পারেন ঠিকই, তবে রুমা এবং জুমার মত এইরকম ফুটবলপ্রেমী মেয়েদের কিন্তু তা নিয়ে কোন আতঙ্ক নেই। তারা স্পষ্টই জানিয়েছে, বাড়ি থেকে আমাদের খেলার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ দেওয়া হয়ে থাকে
।আমরা ফুটবল খেলবো।জেলা, রাজ্য এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করব।’এ বিষয়ে যথেষ্ট দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কোচিং ক্যাম্পের কোচ অমিত সরদার এবং হাসান মন্ডল। এর আগে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত ইন্ডিয়ান বেবি লিগে অনূর্ধ্ব ১২ বয়সের বিভাগে এবার জেলাস্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছিল রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের দুই ছেলে।
নদীয়ার শান্তিপুরের ব্লকের আরবান্দি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচপোতা গ্রামের বাসিন্দা অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়সী দুটি ছেলের নাম রাজ শেখ ও আনোয়ার শেখ। দুজনেই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।দুজনেরই বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সংসারে অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। অবশ্য সেই অভাবের মধ্যেও জীবনে বড় হয়ে ওটার ইচ্ছা তাদের এখন থেকেই রয়েছে ভীষণভাবে। আর তাই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রবল ইচ্ছা তাদের। সেই ইচ্ছেকে বাস্তবের রূপদান করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওই গ্রামের অমিত সরদার এবং হাসান মন্ডল নামে দুই যুবক। পাঁচপোতা তরুণ সংঘের মাঠে তারা মাস ছয়েক আগে শিশু-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলে একটি ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে তারা ছেলে এবং সেই সঙ্গে মেয়েদেরও ফুটবল কোচিং দেওয়া শুরু করেন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মেয়েরাও বর্তমানে সেই কোচিং ক্যাম্পে ফুটবল শিখছে। রাজ এবং আনোয়ার সেখানেই ফুটবল কোচিং নিয়ে নিজেদের খেলায় দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়ান ফুটবল লীগের কোচিং ক্যাম্পের একজন কোচ খবর পেয়ে শান্তিপুর পাঁচপোতা তরুণ সংঘের মাঠে অমিতদের কোচিং ক্যাম্পে এসে হাজির হয়েছিলেন। এরপর প্রমোদনগরের মাঠে শুরু হয় বাছাই পর্ব একটি খেলা। সেখানেই ভালো খেলে রাজ এবং আনোয়ার ইন্ডিয়ান ফুটবল লীগের জেলাস্তরের খেলায় খেলার সুযোগ অর্জন করে। তারা দুজনেই জানিয়েছে,’পড়াশোনার সঙ্গে তারা ক্যাম্পে গিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস করে। আগামী দিনে তারা আরো ভালো খেলা খেলে রাজ্য এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চায়।
অমিত সরদার জানিয়েছেন,’তরুণ সংঘের মাঠে মাসছয়েক আগে আমি এবং হাসান দুজন মিলে একটি কোচিং ক্যাম্প শুরু করি। সেখানে গ্রামের সাত আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোররাও ওই কোচিং ক্যাম্পে এসে ফুটবল শেখা শুরু করে। ধীরে ধীরে তাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। যদিও আমরা এখনো পর্যন্ত ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলার জন্য সরকারি সহযোগিতা পায়নি। ক্লাবে খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম তেমন নেই। তবুও আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে ছেলে এবং মেয়েদেরও আমরা ফুটবল খেলার কোচিং দিচ্ছি। সেখানে কোচিং নিয়ে রাজ এবং আনোয়ার এ বছর অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত ইন্ডিয়ান বেবি লিগে জেলাস্থরে বাছাইপর্বে চান্স পেয়েছে। এটা গর্বের বিষয়।