মলয় দে নদীয়া :- স্বামীর বয়স ১০৭, স্ত্রীর ৯০ এখনো কারোর সাহায্য ছাড়াই হাত ধরে পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরসূরীদের বাড়িতে বাড়িতে কুটুম্বতা রক্ষা করতে ঘুরে বেড়ান বিনা ক্লান্তিতে। নদীয়ার শিকারপুর থেকে থেকে শান্তিপুরে নাতির ঘরে পুতির টানে বেড়াতে এলেন ।
শান্তিপুর বেলঘড়িয়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতের গার্ডের বাড়ি এলাকায় বৃদ্ধ বৃদ্ধা কে দেখতে পাড়া ঘরে লেগেছে ভিড়। চায়ের দোকান থেকে, বাজার হাট সর্বত্র একই আলোচনা, গান্ধীজী, জহরলাল নেহরু, জাকির হোসেন, নিগমানন্দ সরস্বতী, রাজ্যপাল হরেন মুখার্জি কে স্বচক্ষে দেখা এবং সান্নিধ্য পাওয়া বৃদ্ধের স্বাধীনতার নানান গল্প লোকজনের মুখে মুখে।
বাংলাদেশের গান্ধী থানা বেদবেরিয়া গ্রাম থেকে , বর্তমান নদীয়ার শিকারপুর কেচোডাঙায় শতবর্ষ কাল আগে, স্থাবর সম্পত্তির বিনিময়ের মাধ্যমে, সাত বছরের উপেন্দ্রনাথ সরকার বাবা গৌড় চন্দ্র সরকারের হাত ধরে চলে আসেন বর্তমান রাজনৈতিক ম্যাপের ভারতবর্ষে। বাবা পেশায় ছিলেন কামার, মৃত্যুর পর উপেন বাবু আনাজের ব্যবসা তারপর জামা কাপড়ের। অভাবের সংসারে মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়া হয়ে ওঠেনি সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে। নিয়মিত শরীরচর্চা করা সে সময় শক্তিশালী বলিষ্ঠ চেহারা ভয় পেতেন ইংরেজরাও, বিপ্লবী শিক্ষক সুধীন ত্রিবেদীর নেতৃত্বে নিগমানন্দ সরস্বতীর অনুগত উপেন বাবুর ডাকে যুবসমাজ এক হতো ভরসা করতো তাকে।
তৎকালীন রাজ্যপাল হরেন মুখার্জির সাথে করমর্দনের সৌভাগ্য হয় তার। বহুবার জহরলাল নেহরু গান্ধীজী কে সামনাসামনি দেখেছেন শুনেছিলেন জ্বালাময়ী ভাষণ, অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন দেশ স্বাধীনের মহামন্ত্রে। তবে ধৈর্যচ্যুতি হয়ে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন লেঠেল বাহিনী, সেখানকার ইংরেজ সাহেবকে সজোরে জয় হিন্দ বলতে বাধ্য করিয়েছিলেন তিনি।
যদিও তিনি স্বীকার করেন, ওই ইংরেজ সাহেব তাদের প্রতি কোন অত্যাচার অবিচার খুব একটা করতেন না বরং বেশ কিছু ভালো কাজ করেছিলেন গ্রামে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে সামগ্রিকভাবে বিপ্লবীদের আত্ম বলিদানের কথা ভেবে তাকে জোরপূর্বক তাড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
স্ত্রী শ্যামলী সরকার জানান, অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় ১৪ বছরে বিবাহ হয় উপেন বাবুর সাথে, ৭৬ বছর আগে বিবাহ হয় তাদের, তখন উপেন বাবুর বয়স ছিল ৩১, সেই থেকে একইভাবে জীবনযাত্রা দেখে আসছেন তিনি। কোনরকম নেশার সামগ্রী ব্যবহার করেন না তিনি, সকালে চারটের মধ্যে উঠে পারেন এখন এরপর শরীর চর্চা , নিজে হাতে লিখতে পারেন তিনি কাগজ পড়েন নিয়মিত। অসম্ভব মনের জোর। কয়েক বছর আগে মেজো ছেলের মৃত্যুতে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন তিনি। ছেলে এবং মেয়ের নাতির ঘরের পুতির সংখ্যা প্রায় ২১ জন । তাদের দুঃখ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে করোনা পরিস্থিতি পার হলেও, পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণদের বিবাহের ৭৫ বছরে ছিলো করোনা পরিস্থিতি তাই পালন করা সম্ভব হয়নি। ৮০ বছরের দাম্পত্য সেলিব্রেট করতে চায় তারা।