মলয় দে, নদীয়া :-বাড়তি রোজগারের আশায় মিজোরামে কাজে গিয়ে পাহাড়ে ভূমি ধসে মৃত তেহট্টের তিন ও চাপড়ার এক জন। মোট নদীয়ার চার যুবকের মৃত্যু। মৃতরা হলেন তেহট্টের রাকেশ বিশ্বাস, মিন্টু মন্ডল , বুদ্ধদেব মন্ডল ও চাপড়ার মদন দাস। বাকি সকলের বাড়ি তেহট্ট কালিতলা পাড়ায় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায়। জানা গিয়েছে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার তারা বাড়ি থেকে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করতেন তারা। সোমবার খাদানে নেমে কাজ করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। ধ্বস নেমে খাদানের ভিতরেই আটকে শ্রমিকেরা।
জানা গিয়েছে সেখানেই ছিলেন নদীয়ার এই চার যুবক। মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর খবর বাড়িতে এসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার।সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মিজোরামের হেশথিয়াল জেলার মৌদড় গ্রামের পাথরের খাদানে।
মিজোরামের হেশথেলিয়া জেলা প্রশাসনের ভূমিধসের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে সোমবার আনুমানিক দুপুর ২.৪০ নাগাদ ঐ খাদানে ভূমিধস নামে। এরপর সেখানে চলে উদ্ধারকার্য। ঐ রিপোর্টে ভূমিধসের জন্য নিখোঁজ ১২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গিয়েছে, বাকিদের খোঁজ চলছে। তাদের মধ্যে চারজনই এই জেলার। তেহট্টের কালিতলা পাড়ারই রয়েছে তিনজন, চাপড়ার একজন। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার জেলা হাসপাতালে। তাদের দেহ বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করছে মিজোরামে প্রশাসন বলে জানতে পারা গেছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্টের কালিতলা পাড়ার রাকেশ বিশ্বাস, বুদ্ধদেব মন্ডল ও মিন্টু মন্ডল। এদের বাড়ি পাশাপাশি একই জায়গায়। একসাথেই গত ৮ ই নভেম্বর তারা মিজোরামে একটি সংস্থার হয়ে পাথর ভাঙার কাজে যায়। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে মিন্টু পরিবারের একটাই ছেলে। রাকেশরা তিন ভাই বোন, সে বড় ছেলে। বুদ্ধদেবরা চারভাই বোন, তবে সে ছোট ।
তেহট্টের তিনজনেরই বন্ধু অমিত মন্ডলের কথায় মিজোরামে ভূমিধসের খবর পেয়ে অনেকেই মঙ্গলবার সকাল থেকে কালিতলা পাড়া এলাকায় ভিড় জমিয়েছিল। কিন্তু সঠিক খবর এলাকার অনেকেই না পেয়ে সরাসরি ওই তিন যুবকের বাড়িতে যেতে পারছিল না। কিন্তু কোন একটা অজানা আতঙ্ক ওই তিন যুবকের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে সকাল থেকে লক্ষ্য করা গিয়েছে। আর সেই কারণেই বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনকে নানা দিকে ফোন করতে দেখা যাচ্ছিল। তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয় এদিন দুপুরবেলায়। মিজোরাম থেকে ওই খাদানের এক কর্মী এক বন্ধুকে ফোনে ঘটনার কথা জানায়। এই খবর চাউর হতেই কালিতলা পাড়ার তিন পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।
অন্যদিকে একই অবস্থা চাপড়াতেও। একই জায়গায় পাথর ভাঙার কাজ করার সময় ধসে মৃত্য হয়েছে চাপড়ায় পিঁপরেগাছি এলাকার বাসিন্দা মদন দাসের(২৫)। আট দিন আগে একই সাথে সে কাজে গিয়েছিল।বুদ্ধদেবের বাবা সুনীল কুমার মন্ডল বলেন, সোমবার দুপুরে ফোনে কথা হয়। খাওয়া দাওয়া বিষয়েই বেশি কথা হয়েছে। তারপর কাজে যাওয়ার সময় হয়েছে বলে ফোন রেখে দেয়। এটাই ছেলের সাথে শেষ কথা হয়েছে আমাদের পরিবারের। এখন দেহ ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষাণু রায় (গ্রামীন) জানান মিজোরামে দেহগুলি ময়না তদন্ত চলছে। দেহগুলি আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শীঘ্রই দেহগুলি তেহট্টে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।