শারীরিক নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নেটে ৯৯.৩১ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পাস নদীয়ার পিয়াসা’র

Social

মলয় দে নদীয়া :-দেহের উচ্চতা মাত্র তিন ফুট, দু পা নেই বললেই চলে, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু কাজকর্ম সারতে হয় মায়ের কোলে চড়েই স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরিয়ে নদীয়ার শান্তিপুরের পটেশ্বরীস্ট্রিটের বাসিন্দা বছর পঁচিশের পিয়াসা মহলদার এবার নেট পরীক্ষায় ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে অবাক করেছেন। যদিও এর আগে উচ্চ মাধ্যমিকে এবং স্নাতক পরীক্ষায়ও চমকপ্রদক ফলাফল করেছিলো সে। শখ ছিলো, শিক্ষকতা করার। এবার সেই স্বপ্ন সফলের পথে।নেট উত্তীর্ণ মাত্র এক শতাংশ স্থান পায় অধ্যাপনায়।

এবার তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার হিসেবে যে কোন কলেজে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন অথবা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

পিয়াসা জানিয়েছেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে চাকরি পেতে গেলে এখন ভ্যাকেন্সি না থাকার ফলে অনেকটা সময় লাগবে। তাই সে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করতে চাই বাংলা নিয়ে যেহেতু রবীন্দ্র সাহিত্য বিষয় ছিল, তাই গবেষণার বিষয়ও রবীন্দ্র কেন্দ্রিকই হবে। তবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ পেলে সবথেকে বেশি ভালো হয়। তার কারণ সেটা তার বাড়ির কিছুটা কাছাকাছি হবে। পিএইচডি করতে গেলে সেখানে থাকতে হবে, পরিবারের একজন সদস্য নিয়ে।
পিয়াসা মহলদার জন্ম থেকেই শারীরিক দিক দিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম। তার দুটি পা নেই, কোমর পর্যন্ত তার শরীরের গঠন। দুটি হাত থাকলেও তা দিয়ে ভারী কিছু ধরার মত ক্ষমতা নেই। বেশিরভাগ সময় শুয়ে শুয়েই তাকে পড়াশোনা করতে হয়। মায়ের কোলে চেপে যেতে হয়েছিল স্কুলে। মাধ্যমিকে চমক ধরানো রেজাল করেছিলেন পিয়াসা। উচ্চ মাধ্যমিকে শান্তিপুর শহরের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পর কল্যাণী ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি এম এ কমপ্লিট করেন। এরপরেই নেট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। এ বছরও তাকে একইরকম ভাবে শুয়ে শুয়ে কম্পিউটার চালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

পিয়াসার বাবা উত্তম মহলদার কলকাতা পুলিশের একজন কর্মী।মা সুপ্রিয়া মহলদার গৃহবধূ।ভাই প্রত্যুষ মহলদার বর্তমানে বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সুপ্রিয়া মহলদার এবং তার ছেলে প্রত্যুষ পিয়াসার পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করে এসেছেন। তাই পিয়াসার এমন ফলাফলে তারা ভীষণ খুশি। যদিও পিয়াসাকে পড়াশোনা করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে হয়েছে। ছোটবেলায় পড়াশোনা আদৌ তিনি করতে পারবেন কি না,সেই সন্দেহে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ পিয়াসা স্কুলে ভর্তি নিতে চায়নি বলে। যদিও পিয়াশার পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছার কাছে মাথা নত করতে হয়েছে সবাইকেই।পিয়াসার এই চমকপ্রদ সাফল্যে খুশি সকলেই। সকলেই পিয়াসার শুভ কামনা করেছেন।

Leave a Reply