ঘরে থাকেন”বুড়িমা” ! ঘরের কোণে ঠাকুরের স্থানে বুড়িমার সেদিনের সাদাকালো ছবি রেখে প্রতিনিয়ত চলে পুজো

Social

প্রীতম ভট্টাচার্য ,নদীয়া: গ্রাম থেকে শহরের ইতিহাস অনেকটা। রাজার শাসন থেকে শহরের বড় হওয়া আজ উৎসবে মাতোয়ারা।রাজার স্বপ্নে পাওয়া পুজো জগদ্ধাত্রী আজ বিশ্ববন্দিত। বুড়িমা থেকে ছোটমা, মেজমা, জলেশ্বরী মা – রা নিজ ঐতিহ্যে বন্দিত, চারসড়ক এখনও শহরের নিজ ঐতিহ্য বহন করে।বুড়িমা এই শহরের মিথ্, গলি থেকে রাজপথ এখন আরাইশো বছরে পদার্পন করলো। শহর এখন উৎসবে আলোকিত।

ঝাঁপের ঘর, টিনের চাল, একরত্তি গলির ভিতর বাড়ি। স্বামী ও দুই সন্ত্বান নিয়ে ছোটো সংসার। প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় চাষাপাড়া বারোয়ারীতে গিয়ে মায়ের কাছে অজ্ঞলি, তারপর মায়ের প্রসাদ খেয়ে বাড়ি ফেরা। ঘরের কোণে ঠাকুরের স্থানে বুড়িমার তখনকার সাদাকালো ছবি রেখে পুজো। প্রতিদিন দুবেলা বাতাসা ধূপ দিয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পুজো করতেন মায়ের।অভাবের মধ্যেই দিন কাটতো পরিবারের। মায়ের সাদাকালো ছবিটি এনেদিয়েছিলো পরিবারের এক প্রবীন সদস্য। সেই থেকেই নিত্যপুজো সারতেন বৃদ্ধা।হঠাৎ একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে বুড়িমার দর্শন,নির্দেশ দেন – এটা আমার বাড়ি, এখানে মন্দির কর, পুজো কর প্রতিদিন,আমি এই বাড়ির মেয়ে। বৃদ্ধা ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করে তোমার মন্দির করার মতো আমার সামর্থ নেই, আমি এই ভাবেই তোমাকে পুজো করবো। চিন্তা করিস না জোগার হয়ে যাবে,তুই লটারী কাট যে টাকা পাবি সেই টাকা দিয়ে আমার থাকার জায়গা করবি। কিছুদিন পর বৃদ্ধা লটারী কাটেন ও লটারীরিতে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পান। স্বপ্নে বুড়িমা বলেন আমি এখানেই থাকবো সকল কে বলবি। বৃদ্ধা বলেন তুমি যে এখানে থাকবে মানুষ বিশ্বাস করবে কি করে? ঠাকুর বলেন এখানে সকলে যারা পুজো দেবে তাদের আমার স্বানের জল ও পায়ের ফুল দিবি। কারও কাছে কোনো প্রণামী নিবি না।যে আমার এই স্বানের জল সেবন করবে তার রোগ দূর হবে।কোনো কবজ তাবিজ দিবি না আর কারও কাছে কোনো অর্থ নিবি না,আমি এখানেই থাকবো, তোর কোনো অভাব থাকবে না, পুজোর জোগার ঠিক হয়ে যাবে। এখন এখানে পাকা ঘর, ঘরের এক কোনে বুড়িমার সাদাকালো ছবি গহনায় ঢাকা। শুনতে অবাক হলেও বুড়িমা এখানে ধন্বন্তরী। বাহাত্তর বছর বয়সী তাপসী সাহা দর্জিপাড়ায় বাপের বাড়ি থেকে বিয়ে হয়ে অনেক ছোট বয়সে চলে আসেন কৃষ্ণনগর রায়পাড়া মালিপাড়া নিবাসী হরেন সাহার ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে।বুড়িমাকে স্বপ্নে পেয়েছেন এগারো বছর পরে।এখনও প্রতিদিন মা মেয়ের কথা হয় স্বপ্নে।

প্রতি পৌষমাসে শুক্লপক্ষের পঞ্চমীতিথিতে বাৎসরিক পুজো হয়।বাৎসরিক পুজোর দিন এখানে অনেক মানুষ তাদের মঙ্গলকামনায় ভীড় জমায়, বাইরে থেকেও অনেকে আসেন বুড়িমা দর্শনে। বুজরকি বলে অনেক ঝামেলাও পোয়াতে হয় তাপসী সাহাকে, কিন্তু কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকেনি। আসলে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তাপসী সাহা যখন তার এই গল্প বলছিলেন রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো, তিনি বলেন আমি দুবেলা নিত্য পুজো করি, কোথাও গিয়ে রাতে থাকতে পারিনা, তার নির্দেশ কোথাও রাত কাটানো যাবে না, তার খাওয়ার অসুবিধা হয়।মায়ের গা ভর্তি গহনা, এভাবেই খোলামেলা বাড়িতে তিনি থাকেন, বহুমানুষের আনাগোনা, কোনোদিন চোরে ছুঁয়েও দেখেনি,এখানে যারা আসেন রোগের নিরাময় ঘটাতে, তাদের প্রত্যেকের মায়ের স্বানের জল খেয়ে রোগ নিরাময় হয়েছে।এটাই আমার বিশ্বাস,মনে ভক্তি ও বিশ্বাস রাখলে মা তাদের রোগ নিরাময় করেন,অনেকে আজ সুস্থ।পাশে বসে থাকা বয়স পঁচাত্তরের রানু পাল বললেন জানো আমার শরীর ঘায়ে ভর্তি হয়েগিয়েছিলো, মায়ের স্বানের জল খেয়ে আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। বুজরুকি, ব্যাবসা এখানে কোনো পসার জমাতে পারেনি। ভক্তি ও বিশ্বাস কে সঙ্গী করে ” বুড়িমা ” এই বাড়ির আদরের মেয়ে, পরিবার এখানে অন্ধভক্তের দল যাদের মুখে ও মনে বুড়িমা নিত্য বুলি- জপতে বুড়িমা, শয়নে বুড়িমা, জয় বুড়িমা।রেউই থেকে কৃষ্ণনগর দুই বুড়িমার এক অজানা গপ্পো শত মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই শহরের অন্দরে।

Leave a Reply