ক্ষুধা নিবারণের জন্য গ্রামের ছেলেরাই হয়ে উঠেছিল ডাকাত! জানুন হাড় হিম করা নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার ডাকাতে কালির ইতিহাস

Social

মলয় দে নদীয়া:-সোমবার দেশের সবথেকে বড় উৎসব দীপাবলি। গোটা বাংলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হবে কালীপুজো। তবে নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা কৃষ্ণগঞ্জের ডাকাতে কালি নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা রয়েছে এ বছর।

জানা যায় অতীতে এখানে একদল ডাকাত পুজো করতেন মা কালীর, সেই থেকেই এই কালীর নাম ডাকাতে কালি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই পুজো ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এখানে দেবী রক্ষাকালী এবং পুজো করা হয় শাক্ত মতে। সেই কারণে বলি প্রথার চল এখনও রয়েছে এই পুজোয় বলে জানা যায় পুজোর এক সদস্যের কাছ থেকেই। পুজোর ভোগে নিরামিষ খিচুড়ি, একাধিক ভাজা, তরকারি, ফল, মিষ্টি থাকে। এই পুজো দেখতে বহুদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।

প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে আজও একাধিক পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। জানা যায় স্বাধীনতার আগে গ্রামবাসীরা অভাব অনটনেই দিন কাটাতো। দুবালা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা ছিল দুঃসাধ্য। সেই সময় গ্রামের কয়েকজন যুবক সিদ্ধান্ত নেয় তারা ডাকাতি করবে। লাঠি খেলায় পারদর্শী সেই সমস্ত যুবকের স্বাস্থ্য ও ছিল বেশ ভালো। সেই সময় ছিল ইংরেজদের কড়া শাসন। রাতে হঠাৎই খবর আসে ব্রিটিশদের একটি মালবাহী ট্রেন যাচ্ছে ঢাকার দিকে। ওই ট্রেনে রয়েছে একাধিক খাদ্য সামগ্রী। মাজদিয়ার ইছামতি ব্রিজের ওপর মালবাহী ট্রেন যাওয়ার সময় লণ্ঠনের আলো দেখিয়ে ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে ট্রেনের সমস্ত সামগ্রী লুট করা হয়।

এই খবর পৌঁছে যায় ব্রিটিশ বাহিনির কাছে এর পরেই ডাকার দলটি আশ্রয় নেয় জঙ্গলে। পরে ডাকাতরা সেই সমস্ত লুট করা খাদ্য সামগ্রী গ্রামের মানুষদেরকে বিলিয়ে দেন। সেই ডাকাত দলে থাকা কৃত্তিবাস মৈত্র, ভরত সর্দার, দুলাল প্রামাণিক, হেমন্ত বিশ্বাস, গিরীন্দ্রনাথ ঘোষসহ একাধিক যুবক ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয় জঙ্গলে দিন কাটাতে থাকেন। এরপর ব্রিটিশ বাহিনীর ফিরে যায় ফিরে যাওয়ার পরের দিনই ছিল কালীপুজোর অমাবস্যা। এরপরেই তারা মা কালীকে স্মরণ করে তার পুজো শুরু করেন।

তবে সেদিন যারা ডাকাত বলে পরিচিত ছিল তাদের মাজদিয়ার ঘোষপাড়ার মানুষজন আজও সম্মানের চোখেই দেখেন। তারা জানান ওরা ডাকাতি করত গরিব মানুষদের পেট ভরানোর জন্যেই। তারা কোনদিন মানুষ খুন করেনি ডাকাতির টাকা দিয়েই করতেন মায়ের পুজো। সেই থেকেই মাজদিয়া ঘোষপাড়ার ডাকাতে কালীর পুজোর আজও করা হয় ভক্তি সহকারে।

Leave a Reply