মলয় দে নদীয়া :-প্রতিমা তৈরি উপকরণের দাম এমনিতেই বাড়ছিল। লকডাউনের দু বছরের জন্য সেই দাম মাত্রাছাড়া করে দিয়েছে। আশার কথা একটাই, এবছর প্রতিমার অর্ডার আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে অর্থাৎ ভালোই। কিন্তু প্রতিমার দাম পুজো উদ্যোক্তারা আর বাড়াতে চাইছেন না। আর তার জন্যই সমস্যাই করেছেন প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা। নদীয়ার শান্তিপুরের চৌগাছা পাড়াতে এমন প্রতিমা শিল্পী অনেকেই আছেন, যারা প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ার জন্য কার্যত তিতিবিরক্ত। তাদের মধ্যে প্রতিমা শিল্পী সুদিন পাল,প্রদীপ পালরা জানিয়েছেন,’ প্রতিমা তৈরি করতে কাঠামো তৈরি করা অনেক আগেই দরকার। আর সেই কাঠামো তৈরিতে লাগে বাঁশ, পাটের দড়ি, বিচালি কিন্তু মূল উপকরণ। এছাড়া প্রতিমার কাঠামো তৈরির পর দরকার মাটি। এই প্রত্যেকটা জিনিসের দাম প্রচন্ডভাবে বেড়েছে। প্রতিমা শিল্পীদের মতে এইসব উপকরনের দাম বর্তমানে আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ। বাধ্য হয়ে সেই দামেই তাদের বাঁশ, বিচালি, পাটের দড়ি এবং মাটি কিনতে হচ্ছে। বড় বড় প্রতিমার ক্ষেত্রে দুর্গা, সরস্বতী,লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে যে পোশাক পরানো হয়, তার দাম বেড়েছে মারাত্মকভাবে। এইসব পোশাকের কাপড় আসে সুরাট থেকে। দাম বৃদ্ধি হওয়ার পরেও প্রতিমা তৈরীর কারিগরদের বা শিল্পীদের অত্যন্ত বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে সেই সব উপকরণ ।
সুদিন পাল, প্রদীপ পালরা জানিয়েছেন,’ বেশি দামে কেনা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। মাটির দাম অস্বাভাবিকভাবে। মারাত্মকভাবে বেড়েছে পাটের দড়ি সহ বিচালির দাম। আবার ভালো মানের বিচালি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন মাঠ থেকে ধান তোলার পর মেশিনের মাধ্যমে ধান বার করা হয়। ফলে বিচালির সাইজ হয়ে যাচ্ছে ছোট। আমাদের প্রতিমা তৈরীর ক্ষেত্রে হচ্ছে চূড়ান্ত অসুবিধা। কিন্তু উপায় নেই। বেশি দাম দিয়ে ছোট আকারের সেই বিচালি এবং মাটি, সেই সঙ্গে পেরেক,বাঁশ কিনে আমাদের প্রতিমা তৈরির জন্য কাঠামো তৈরি করতে হচ্ছে। এবং সেইসঙ্গে সেই কাঠামতে বিচালি দিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে প্রতিমার শরীরের অবয়ব। এরপর বেশি দাম দিয়ে কেনা মাটি দিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে প্রতিমা। তবে অন্যান্য বছর এই সময়ে বৃষ্টিতে আমাদের ভীষণ রকম ভোগান্তি সইতে হয়। এ বছর এখনো পর্যন্ত দেখা দিয়েছে কিছুটা আশার আলো। তার কারণ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এ বছর অনেকটাই কম। প্রায়দিনই দেখা যাচ্ছে রোদ ঝলমল আকাশ। তাই প্রতিমা তৈরীর পরেই সেই প্রতিমা শোকাতে আমাদের অনেক কম সময় লাগছে। আর এই কারণে বেশি পরিমাণে আমরা প্রতিমা তৈরি করতে পারছি এখনও পর্যন্ত।’ আর তাই প্রতিমা তৈরির উপকরণের জন্য বেশি পরিমাণ খরচা করতে হলেও রোদ ঝলমল আকাশের জন্য প্রতিমা শোকাতে তারা অনেকটাই সাবলীলবোধ করছেন।’ যদিও প্রতিমা শিল্পীদের অভিযোগ একটাই,’ আগেই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার জন্য যা খরচ হতো তার মধ্যে থেকে আমরা ভালো পরিমান লাভের অংক দেখতে পেতাম। কিন্তু পূজো উদ্যোক্তারা প্রতিমার দাম বাড়াতে রাজি হচ্ছেন না। আর তাই প্রতিমা তৈরির উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কারিগরের মজুরি মিটিয়ে আমাদের লাভের পরিমাণ একেবারেই কমে গিয়েছে।’ যদিও এত কিছুর পরেও এবারও মা আসছেন। সময় কিন্তু আর বেশি নেই ।শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন । প্রায় ৪০ বছর ধরে বিচালির ব্যবসায়ী মিহিত আলি শেখ জানিয়েছেন,’ এবারে বিচালির দাম প্রায় তিনগুন বেড়ে গিয়েছে।কিন্তু কী করব, দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার জন্য উপকরণের খরচ মিটিয়ে, কারিগরদের পারিশ্রমিক দিয়ে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, সেই পরিমাণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদ্যোক্তারা যদি প্রতিমা তৈরির দাম বাড়িয়ে দেন, তবেই আমরা লাভের মুখ দেখতে পাব,নচেৎ নয়, জানিয়েছেন দুর্গা প্রতিমা তৈরীর শিল্পী অর্থাৎ কারিগররা।