নাকতলা থেকে দার্জিলিং ! একমাস ধরে রিকশা চালিয়ে পাঁচ শতাধিক অশোক গাছের বীজ বিতরণ করলেন সত্যেন দাস

Social

মলয় দে নদীয়া:-অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা খুব বেশি করা হয়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হোক বা রাজ্যের প্রতিটি ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের সত্যেন দাস ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্র-ছাত্রীদের কেও পেছনে ফেলে। পড়াশোনা না করেও ভারতবর্ষের মানচিত্র এবং বিভিন্ন রাস্তাঘাট স্থানীয় এলাকার নাম তার মুখস্থ। অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা বাধ সাধতে পারেনি, ভ্রমণপিপাসু রিক্সাচালক কে। উপার্জনের একমাত্র রিক্সা নিয়েই শুধু ভ্রমণ করেন তাই নয়, পরিবেশ রক্ষার একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই রওনা হন তিনি।

এবারে বিশ্ব উষ্ণায়নে মানুষের ভূমিকা নিয়ে দক্ষিন ২৪ পরগনার বারইপুর থেকে একমাস আগে রওনা হয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সময়ের মতো এবারও তার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হলো নদীয়া শান্তিপুরে। সত্যেন বাবু বলেন, তার পরিবারে বাবা মা স্ত্রী এবং এক মেয়ে বর্তমান। বারুইপুরে থাকলেও রিকশা চালান দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা গীতাঞ্জলির কাছে। বাবা ফকির দাস ৪৬ বছর বয়সেও রিকশা চালান বারুইপুরে। মেয়ে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পড়াশোনা করছে ইংরেজি নিয়ে। পরিবেশের বিভিন্ন বার্তা নিয়ে তার এই ভ্রমণ, পরিবারের থেকেও উৎসাহিত করে তাকে।

তিনি বলেন প্রথম যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালে।মাত্র আড়াই দিনে পুরি, পাঁচদিনে দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং,১২ দিনে হরিদ্দার, ৪০৩ দিন ধরে সারা ভারত ভ্রমণ করেন, তবে তখন ছিলেন একা এবং ভ্রমণ করেছিলেন সাইকেল চালিয়ে।

বিবাহের পরে স্ত্রী এবং আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে পাঁচ দিনের জন্য মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন পুরীতে। তৎকালীন সময়ে মাথাপিছু ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না তার পক্ষে, প্রবল ইচ্ছা শক্তির ফলে কন্যাকে রিক্সায় চাপিয়ে মনের জোরে রওনা দেন তিনি। তারপর থেকেই ভ্রমণের নেশা আরো চেপে বসে তাকে।
এর পর কিছুদিন কাটতেই স্ত্রীর অনুরোধে ২০০৭ সালে দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে ছয় দিন ধরে রিক্সা চালিয়ে কে গিয়েছিলেন আবারো পুরীতে । গয়া আগ্রা আজমির অমৃতসর কুনুমালানী এইরকম ২১ টি পুণ্যভূমিতে তার রিক্সার চাকা গড়িয়ে চলে প্যাডেলের চাপে ।

তার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া নতুন রিক্সা অপর আর এক শুভাকাঙ্ক্ষীর আনুমানিক ৫০০টি অশোক গাছের বীজ নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন এলাকার পরিবেশপ্রেমী মানুষের কাছে পৌঁছে অশোকের বীজ থেকে মহীরূহ বানানোর দায়িত্ব দিয়ে ফিরেছেন তিনি। তিনি আশাবাদী পরের প্রজন্ম, এর সুফল পাবে।
তবে সত্যেন বাবু বলেন, রাতে নয় দিনেই, প্রখর রৌদ্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই তার কষ্টকরযাত্রা, তবেই উষ্ণায়নের কষ্টকর উপলব্ধিতে মিলবে সফলতা ।

তবে পথে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনকি ব্যবসায়িক সংস্থাও পর্যন্ত তাকে সহযোগিতা করছেন বলেই জানিয়েছেন। সত্যেন বাবু কে কুর্নিশ জানিয়ে সকল দর্শক এবং পাঠকদের প্রতি আমাদের সংবাদ মাধ্যমের করজোড়ে আবেদন গ্লোবাল ওয়ার্মিং রুখতে সন্তানের মতো করেই প্রতিপালন করুন মাত্র একটি বৃক্ষ। রুখে দাঁড়ান গাছ কাটার বিরুদ্ধে। রক্ষা করুন ধরণীকে, প্রজন্মের জন্য উপহার দিন বসবাসযোগ্য শীতল পৃথিবী।

Leave a Reply