মলয় দে নদীয়া:-চিকিৎসকদের জার্নাল অনুযায়ী বিশ্বের ১৭তম, বিরল জটিল অস্ত্রোপচার সফল হলো নদীয়ার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। প্রতি ২০০ গর্ভবতী মায়ের মাত্র এক জনের জরায়ুর আকার হৃদয়াকৃতি হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সন্তানপ্রসব কোনো বিপদজনক নয়। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দুটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত জরায়ূ অথচ জরায়ুর মুখ একটিই, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় বাইকর্ণ্যুয়েট ইউটেরাস ইউনিকর্ণ সার্ভিস।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী এমন ঘটনা বিরল, বিপদজনকও বটে। ডাক্তারি বিভিন্ন জার্নাল ঘেটে মাত্র ১৬ টি নিদর্শন পাওয়া গেছে এই পর্যন্ত, গতকাল রাতে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ধরনের একটি সফল অস্ত্র প্রচার করেন গাইনোকলজিস্ট ডক্টর পবিত্র বেপারী।
তিনি সম্প্রতি, তিন মাস হলো চিকিৎসক হিসেবে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন। এস এন সি ইউ, সি সি ইউ এবং ব্লাড ব্যাংক না থাকলেও তিনি আসার পর থেকে প্রসব জনিত কারণে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর একেবারে বন্ধ। সম্প্রতি তিনি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এপিটোপিক অপারেশনে করে জেলাচিকিৎসক মহলে সাড়া ফেলেছিলেন।
মামনি বিবি নামে এক প্রসূতি মায়ের দুটি জরায়ু থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রপ্রচার করে দুটি পৃথক সুস্থ সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখান, যার প্রথম সন্তান কন্যা ওজন ২.৩২০ গ্রাম এবং দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের ওজন ২.২৫০ গ্রাম। যমজ দুই শিশু এবং মা সকলেই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গাইনোকোলজিস্ট ডক্টর পবিত্র বেপারী বলেন এই ধরনের, অপারেশন তার চিকিৎসক জীবনে এই প্রথম, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো প্রবল, সেই মতো প্রসূতি মায়ের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ জেনে বি এস ইউ এবং প্রসূতি মায়ের স্বামী র একই রক্তের গ্রুপ হওয়ায় কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলাম।
পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকলেও, অজ্ঞানের ডাক্তারবাবু অভিজিৎ হালদার, রেডিওলজিস্ট ডক্টর শীল , বাচ্চাদের ডাক্তার বাবু অরূপ বাসু , সহ সমস্ত মেটারনিটি স্টাফ, ওটি স্টাফদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং কর্দক্ষতার জোরে, সর্বোপরি সুপারেনটেন্ড ডক্টর তারক বর্মনের অনুমতিক্রমেই মিলেছে এই সফলতা।
নবজমজ সন্তানের পিতা হাঁসিবুল শেখ, সুদূর পলাশীপাড়া থেকে গতকাল সকালে শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে স্ত্রীকে ভর্তি করাতে নিয়ে আসেন শান্তিপুর হাসপাতালে। তিনি বলেন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে এ ধরনের রোগ সারানোর অর্থ জোগাড় করতে পারতাম না। পাঁচ বছর বিবাহ হলেও পরপর দু’বছর দুটি সন্তান নষ্ট হয়। সন্তানের বাবা হবো কখনো ভাবতে পারিনি, পাঁচ বছর ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলো আমার স্ত্রীও। গত এক বছর আগে একমাত্র বোন সেও মারা যায়, বর্তমানে একমাত্র সন্তান আমি। বংশধর হিসাবে কেউ থাকবে না এটা ভেবে ভাবতেন আমার বাবা-মাও। তখন এই ডাক্তার বাবু পলাশীপাড়ায় একটি বেসরকার সংস্থার আয়োজনে চেম্বার করতেন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এক পয়সাও লাগেনি বরং ডাক্তার বাবু নিজের পকেট থেকে মাঝে মধ্যেই সহযোগিতা করেছেন আমাদের। তাঁর পরামর্শ মতই আজ এখানে আসা।আল্লাহর দূত হিসাবে তিনি আমাদের দুটি পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তিনিই আমাদের কাছে আল্লাহ।