মাতৃপিন্ড দান! প্রাচীন প্রথা মেনে রামকেলিতে চলছে মাতৃপিন্ড দান

Social

দেবু সিংহ,মালদা: প্রাচীন প্রথা মেনে রামকেলিতে আজও চলছে মাতৃপিন্ড দান। সনাতন ধর্মের মহিলা ভক্তরা তাঁদের প্রয়াত মায়েদের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান করে থাকেন। জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু। চলে তিন দিন ধরে।

সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তেরা জানিয়েছেন, দেশের একমাত্র মালদার রামকেলিতেই মাতৃপিন্ড দানের প্রথা আছে। আর কোথাও নেই। কাশি, গয়াতে পিতৃপিন্ড দানের রীতি প্রচলিত। রামকেলিতে কেবল মহিলারাই সুযোগ পেয়ে থাকেন। মালদা শুধু নয়, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িষ্যা থেকে মহিলা ভক্তরা পিন্ডদানে অংশ নেন। গৌড়ের গয়েশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণেই পিন্ডদান পর্বটি সুসম্পন্ন হয়ে থাকে। মৃত্যুর বারো দিন পর থেকে মায়ের আত্মার শান্তি কামনা করে পিন্ড দিতে পারেন তাঁর মেয়ে। সনাতন ধর্ম মতে পর পর তিনবার এখানে এসে পিন্ড দিতে হবে তাঁকে। তাহলেই সম্পূর্ণ হবে তাঁর পিন্ডদান। পিন্ডদানের আগে মন্দিরের পাশের পুকুরে স্নান করতে হবে। ভেজা কাপড়েই বসতে হবে তাঁকে পিন্ডদানে। সঙ্গে জবের ছাতু, তিল, জব, পান, সুপোরি, হরিতকি, ঘি, মধু, আতপ চাল, লাল শালু, ধুপকাঠি নিয়ে বসতে হবে। পিন্ডদানের সময় পুরোহিত বেদ পড়ে শোনাবেন। তারপরে রয়েছে ‘‌বৈতরণী গঙ্গা’‌ পর্ব। ইদানীং জাহ্ণবী নদীটি লুপ্ত হয়ে যাওয়ায় মন্দির প্রাঙ্গণে একটি ছোট নদীর মতো রূপ দিয়ে কৃত্রিমভাবে কাটা হয়েছে। তা গঙ্গার জলে পরিপূর্ণ করা হয়। ছোট একটি নৌকো জলে ভাসানো থাকে। ভক্তরা পা ছুঁয়ে নৌকো এপার-‌ওপার করে থাকেন। তিনবারের বেশি নয়। উপহার হিসেবে মাঝিকে ধুতি, গামছা কিংবা গেঞ্জি দেওয়ার রীতি আজও অক্ষুন্ন। ‌

এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই গৌড়েই রয়েছে রামকেলি। কথিত আছে, রাজা গনেশের রাজত্বের অনেক আগে থেকে রামকেলিতে মহিলাদের পিন্ডদানের রীতি ছিল। মা গয়েশ্বরী মন্দির ছুঁয়ে প্রবাহিত হত জাহ্ণবী নদী। পরে ভৌগোলিক কারণে সে নদী লুপ্ত হয়ে যায়। এমনকি রাজা গনেশের পর অত্যাচারী শাসকদের আক্রমণে মন্দির, মায়ের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বখতিয়ার খলজি’‌র আমলে মন্দিরের ওপরে আক্রমণ হানা হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সব। মন্দিরের প্রধান সেবাইত বৈদ্যনাথ মণ্ডল জানান, ‘‌অনেক পরে আমাদের বাপ-‌ঠাকুর্দারা মিলে মাটির নীচে চাপা পড়া ভগ্নাবশেষগুলি তুলে এনে আবার শুরু হয় পুজো-‌আর্চা। আবার পুরনো প্রথা মেনে মাতৃ পিন্ডদান শুরু হয়। মাতৃপিন্ড দান প্রথাটি খুব পুরনো রীতি এবং রামকেলির একটি অন্যতম গরিমা। ধীরে ধীরে এখানে গুপ্ত বৃন্দাবন গড়ে ওঠে।’‌ রামকেলির প্রধান পুরোহিত মদন পানিগ্রাহী বলেন, ‘‌ক্রেতাযুগে রামচন্দ্রের ১৪ বছর বনবাস কালে এই রামকেলিতে এসেছিলেন। ওই সময় সীতিদেবী উনার মাতৃকূলের পিন্ডদান করেছিলেন। আজও সেই রীতি মেনে মাতৃকূলের উদ্দেশে মাতৃপিন্ডদান প্রথা পালিত হয়ে আসছে। ওই সময় রামচন্দ্র এই জায়গায় কেলিবিহার করেছিলেন বলে রামকেলিধাম হিসেবে পরিচিত।’‌

Leave a Reply