মলয় দে নদীয়া:- নদিয়া তথা বাংলার অন্যতম সুপ্রাচীন মেলা এই কৃষ্ণনগরের বারো দোলের মেলা । এই মেলা প্রতিবছরই কৃষ্ণ নগর শহরের রাজবাড়ীর মাঠে অনুষ্ঠিত হয় । প্রতি বছর এই মেলা দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মানুষের জমায়েত ঘটে ।আসেন প্রচুর পর্যটক ও সাধারণ মানুষ । যদিও একটি অংশের মানুষের ধারণা যে ১৭১০ সালের পরবর্তী সময়ে এই মেলার সূচনা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় । কিন্তু ১৭৫০ সালের সময় ভারত চন্দ্র রায়ের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবার সময় রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকার তথ্য থাকলেও সেই বারো দোলের মেলা সম্পর্কে কোনো প্রকার তথ্য ছিল না ,সেই কারণে মনে করা হয় যে অন্নদা মঙ্গল কাব্য প্রকাশিত হবার পরে মূলত শিব নিবাসে তার রাজধানী স্থানান্তরিত হবার পরবর্তী কলে তিনি কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ী তে ফিরে এলে অর্থাৎ ১৭৭৩ সালে এই মেলার শুভারাম্ভ ঘটেছিল বলে মনে করা হয় । মোট বারো টি বিগ্রহের সমাবেশে এই মেলার সূত্রপাত ঘটেছিল ,সেই কারণে একে বারো দোলের মেলা বলা হয় । যদিও এই বারোটি দেবতার প্রধান বা মুলে থাকতেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর বড়ো নারায়ণ । যদিও বর্তমানে এই বারোটি বিগ্রহের সমাবেশ এখানে ঘটে না ।
মেলা শুরুর প্রথম তিন টি যথেষ্ঠ আড়ম্বরের সাথে বিগ্রহ গুলির পূজা অর্চনা এখনো বিদ্যমান । তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় হলো মেলার প্রথম দিন বিগ্রহ গুলিকে পড়ানো হয় রাজ বেশ , দ্বিতীয় দিন সমস্ত বিগ্রহগুলিকে ফুলবেশে সাজানো হয় আবার তৃতীয় দিন এই বিগ্রহ গুলির জন্য পরিধান করানো হয় রাখাল বেশ । যেটা এই বারো দোলের মেলার অন্যতম প্রধান বিশেষত্ব । তবে যে সকল বিগ্রহগুলো এই রাজপরিবারে আসতেন সেগুলো হলো —- বলরাম , শ্রী গোপীমোহন , লক্ষ্মীকান্ত , ছোটো নারায়ণ , ব্রামন্য দেব , শান্তিপুর শুত্রা গরের গোপাল , অগ্রদ্বিপের গোপাল ,নদিয়া গোপাল , তেহত্ট র কৃষ্ণোরায় , কৃষ্ণচন্দ্র , শ্রী গোবিন্দ দেব , মদন গোপাল প্রমুখ । কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতা পর্যন্ত বিভিন্ন শপিং মল থেকে শুরু করে ছোটো বড়ো নানা রকমের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই মেলায় স্টল দেয় । সমস্ত বিষয় ঘিরে মানুষের উন্মাদনা থাকে যথেষ্ঠ পরিমাণে ।তবে এই মেলায় প্রতীয়মান হলো কলকাতা থেকে কৃষ্ণ নগর পর্যন্ত বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানির শপিং মলের রমরমা । নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে হরেক মালের রমরমা এই মেলাকে এই অন্যতম উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিয়েছে । লক্ষ্মীর ভান্ডার এই মুহূর্তে বাংলার সরকারের বিশেষ প্রকল্প হবার কারণে বিভিন্ন প্রকার বা বিভিন্ন আকৃতির ভান্ডারের রমরমা বিশেষ নজর কেড়েছে । কৃষ্ণ নগর শহরের মাটির পুতুলের খ্যাতি রয়েছে গোটা বিশ্ব জুড়ে । এখানে সেই বিভিন্ন মাটির পুতুলের রমরমা এবং বিশেষ করে কৃষ্ণ নগর শহরের ও বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ চরিত্র গোপাল ভার বিশেষ মাটির পুতুল হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে ।
মেলাটি শুরু হয়েছে রাজবাড়ীর সিংহদুয়ার থেকে একদম সুবিস্তৃত মাঠ জুড়ে রাজবাড়ীর মূল ফটক বা প্রবেশ দার পর্যন্ত । যদিও মেলা শুরু র প্রথম তিন দিন রাজবাড়ীর ঠাকুর ও বিগ্রহের দেখা মেলে । তারপর মেলার বাকি দিনগুলোতে আর বিগ্রহ দর্শন করা যায় না শুধু মেলা দেখতে পাওয়া যায় ।