মলয় দে নদীয়া:- কুড়ি হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এবং কর্মের উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই এই রাজ্যের বাসিন্দা। নদীয়ার এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা সামনে আসলেও শান্তিপুরে খোঁজ পাওয়া গেল পৃথক তিনটি এলাকা এবং পরিবারের হদিস যারা ইউক্রেনে আটকে রয়েছেন।
আর্থিক অনটনে আচ্ছন্ন পরিবার, পরিবারকে কিছুটা সবল করে তোলার তাগিদে ৪ মাস আগে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউক্রেনে। কিন্তু বর্তমানে ইউক্রেনের ঘটনায় ঘুম উড়েছে অধিকারী পরিবারের। দুই দিন ধরে খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ। যতক্ষণ না ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে ততক্ষণ দুশ্চিন্তা কাটছে না তাদের।
নদীয়ার শান্তিপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সুমন অধিকারী (৩১)। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী একটি ছোট সন্তান এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি। বাবা মা মারা গেছে আগেই। কোনরকমে সংসার চলত তাদের। কিন্তু বাড়িতে থেকে যা আর্থিক উপার্জন হতো তাতে আর্থিক অনটন লেগেই থাকত নিত্যদিন। কিছুটা আর্থিক দিক থেকে সফল হওয়ার নেশায় গত চার মাস আগে ডেলিভারি বয়ের কাজে গিয়েছিলেন ইউক্রেনে। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ইউক্রেনের ঘটনা ঘুম কেড়ে নিয়েছে সুমন অধিকারীর স্ত্রী সহ তার পরিবারের সদস্যদের। সুমন অধিকারী স্ত্রী জানাচ্ছেন, তার সঙ্গে ফোনে ইতিমধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। ইউক্রেন ছেড়েছে আপাতত পোল্যান্ডের রয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না বাড়িতে ফিরছি ততক্ষণ দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না পরিবারের।
অপরদিকে বেলঘড়িয়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তালতলা পাড়া এলাকার যুবক অমিত কুমার বিশ্বাস, গত ছয় মাস আগে ইউক্রেনে গিয়ে পৌঁছায়। যদিও সেখানে কোন কাজ না পাওয়াতে যেকোনো কাজের সন্ধানে ছিলেন তিনি। তারপরেই ইউক্রেন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, ইউক্রেনের পরিস্থিতি পরিবার জানা মাত্রই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অমিত কুমার বিশ্বাসের পরিবার। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় অমিতের সাথে ফোনে যোগাযোগ রয়েছে, এখন আমিত পোল্যান্ডে রয়েছে ভালো আছি শুধু এটুকুই জানিয়েছেন পরিবারকে। পরিবারের সরকারের কাছে একটাই দাবি অমিত যেন সুস্থভাবে বাড়ি ফেরে।
তৃতীয় হদিস মেলে শান্তিপুরের গবার চর তালতলা পাড়ায় সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস পেশায় তাঁত শ্রমিক ছিলেন,করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার ফলে, নিরুপায় হয়ে সংসার চালানোর তাগিদে গত ৭ মাস আগে বাড়ির সোনার গহনা, তাঁত বিক্রি করে ইউক্রেনে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান ইউক্রেনের পরিস্থিতি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পরিবারের। সুমন বিশ্বাস এর স্ত্রী মৌসুমী বিশ্বাস বলেন, তার সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। স্বামী এখন ইউক্রেন ছেড়ে কোনরকমে পোল্যান্ডে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত বাড়ি ফিরছে ততক্ষণ চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। সমির বিশ্বাসের বাবা অসিত বিশ্বাস সরকারের কাছে ছেলেকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।